সিনেমা হল চালুর পর স্টিয়ারিং হাতে সৌদি নারীরা
সৌদি নারীদের জন্য আজ (রোববার) এক ঐতিহাসিক দিন। আজ থেকে দেশটির নারীরা গাড়িতে চালকের আসনে বসছেন। থাকছে না কোনো বাধা নিষেধ। উঠছে দীর্ঘ ৬ দশকেরও বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা। এতদিন যাত্রীর আসনে বসতেন নারীরা, এবার চালকের আসনে বসবেন। মধ্যরাতে সৌদি আরবের ১ কোটি ৫১ লাখ নারীর ওপর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা উঠেছে।
সিনেমা ও সিনেমা হল চালুর মাধ্যমে ঐতিহাসিক সংস্কার আনার পর সৌদিতে এবার নারীদের জন্য গাড়ি চালানোর রীতি বাস্তবায়ন হলো। আজ থেকে স্টিয়ারিং হাতে রাস্তায় নামলেন দেশটির নারীরা।
সৌদি যুবরাজ সালমান বিন মোহাম্মদের কথিত সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। গত মাস থেকে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া শুরু হয়।
বিশ্বে সৌদি আরব হল একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তরুণ সৌদি যুবরাজ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেন। ২০৩০ ভিশনের মধ্যে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক ডিক্রিতে নারীদের রাস্তায় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন। তিনি ঘোষণা দেন ২০১৮ সালের ২৪ জুন থেকে নারীরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জুন মাসে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে শুরু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সহস্রাধিক নারীকে গাড়ির লাইসেন্স দেয়া হয়।
পিডব্লিউসি জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে সৌদি আরবে নারী গাড়িচালকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ লাখেরও বেশি। সৌদিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার পদক্ষেপটি দেশটিতে সামাজিক গতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন। সৌদিপন্থী চিন্তন-প্রতিষ্ঠান অ্যারাবিয়া ফাউন্ডেশনের নাজাহ আল-ওতাইবি বলেন, এটা একটা স্বস্তি। সৌদি নারীরা সুবিচার পাওয়ার বিষয়টি অনুভব করছেন।
নারীদের জন্য সৌদি সরকার উচ্চাকাক্সক্ষী পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও এখনও দেশটিতে নারীদের জন্য অন্যতম বড় বড় কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সৌদি নারীদের স্বাধীনতা বাড়লেও এখনও পাঁচটি কাজ করতে পারেন না তারা। সেগুলো হল-
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা : পরিবারের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া একজন নারী এখনও তার নিজের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না। সৌদি আরবে অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত যে ব্যবস্থা আছে তার কারণেই সেটা করা সম্ভব নয়। এর অর্থ হল, প্রত্যেক নারীর একজন করে পুরুষ অভিভাবক আছেন, যিনি তার পক্ষ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
পাসপোর্ট নিতে পারেন না : গাড়ি চালিয়ে হয়তো বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে পারবেন কিন্তু কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া ওই নারী বিমানে উঠতে পারবেন না।
বিয়ে বা তালাক : কাউকে বিয়ে করতে চাইলে পুরুষ অভিভাবকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। ওই নারীর পাঁচ বছর বয়সী একজন ছোট ভাইও কিন্তু তার অভিভাবক হতে পারেন। বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের জন্যও ওই নারীকে তার স্বামীর অনুমতি নিতে হবে।
পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে কফি খাওয়া : ম্যাকডোনাল্ডস বা স্টারবাক্স যে কোনো কফি শপে পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে বসতে পারেন না নারীরা। এর ব্যতিক্রম হলে ওই নারীকে গ্রেফতারও করা হতে পারে।
পোশাকের স্বাধীনতা : কোনো নারী যখন জনসমক্ষে আসবেন তখন তার মুখ ঢাকতে হবে না। কিন্তু তার শরীর আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হবে। কোনো নারী যদি সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যান, সেখানেও বিকিনি পরার কোনো সুযোগ নেই।
নিউইয়র্ক মেইল/জেদ্দা/২৪ জুন ২০১৮/জোসনা হক/এইচএম