পরমাণু সমঝোতা ইস্যুতে ইরানের পাশে ইউরোপ, কোনঠাসা যুক্তরাষ্ট্র
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, মার্কিন সরকার পরমাণু সমঝোতাকে কেন্দ্র করে যতটা একঘরে হয়ে পড়েছে এর আগে আর কখনো কোনো বিষয়ে এতটা কোণঠাসা হয়নি।
তিনি ইরানের দুই নম্বর টিভি চ্যানেলে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আরো বলেছেন, ইউরোপীয়রা নিছক ইরানের স্বার্থ রক্ষার জন্য পরমাণু সমঝোতায় টিকে থাকেনি বরং তারা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থে গোটা বিশ্বের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টিকে মেনে নিতে চায়নি।
তিনি অবশ্য পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের ব্যাপারে ইউরোপীয় দেশগুলোকে আরো বেশি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউরোপ এ পর্যন্ত পরমাণু সমঝোতা রক্ষার লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা ইতিবাচক হলেও যথেষ্ট নয়।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপ এই আন্তর্জাতিক চুক্তি রক্ষার জন্য যেসব রাজনৈতিক প্রতিশ্র“তি দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হলেও এর বাস্তবায়ন এখনো সন্তোষজনক নয়।
এ সমঝোতা রক্ষার লক্ষ্যে এখন ইউরোপকে ইরানের সঙ্গে এই মহাদেশের কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক সহযোগিতার পথ অবারিত করতে হবে, ব্যাংকিং চ্যানেলে ইরানের সঙ্গে লেনদেন শুরু করতে হবে এবং ইরানের তেল খাতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর তা ব্যর্থ করে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছেন, ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক যুদ্ধ শুরু করেছেন এবং রাশিয়া ও তুরস্কের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তার এসব পদক্ষেপ গোটা বিশ্বকে আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
এদিকে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপ এ সমঝোতা রক্ষা করার যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে তা বাস্তবায়নে তেহরানের পক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আমেরিকা ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার যে হুমকি দিয়েছে তার বাস্তবায়ন ঠেকাতে ইউরোপকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্য এরইমধ্যে এ সমঝোতা রক্ষার লক্ষ্যে দু’একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো যাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে না পড়ে সেজন্য ওই ইউনিয়ন একটি সুরক্ষা আইন কার্যকর করেছে।
এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে ইউরোপ আর কি কি পদক্ষেপ নেয় এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে ইরান কতটা সুরক্ষিত থাকতে পারে সেটা দেখার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।