সাংবাদিক নিখোঁজ, সৌদি-তুরস্কের সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন
যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যাওয়া সাংবাদিক জামাল খাসোগি ইস্টানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর হত্যার শিকার হয়েছেন বলে তুরস্কের সরকারি সূত্রের দাবি। এতে সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাবমর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এ ঘটনা বিশ্ববাসীকেও ব্যাপকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ মোহাম্মদের একজন সমালোচক ছিলেন মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের প্রদায়ক জামাল খাসোগি। বিশেষ করে ইয়েমেন সৌদি আগ্রাসনের বিরোধী ছিলেন তিনি।
জামাল খাসোগি হত্যার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করলে তুর্কি কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। তুরস্কের এ দাবি অস্বীকার করেছে রিয়াদ।
তবে ইস্তানম্বুলে বিবিসির মার্ক লোয়েন বলছেন, কোনো ভিত্তি ছাড়া এই ধরণের বোমা-ফাটানো অভিযোগ তুরস্ক করবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন।-খবর বিবিসি বাংলার।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, তিনি নিজে এই ঘটনার তদন্তে কী বেরিয়ে আসছে তা জানতে মুখিয়ে আছেন।
এমনিতেই কাতার, মুসলিম ব্রাদারহুড, ইরান, ইয়েমেন প্রশ্নে মুসলিম বিশ্বের দুই বৃহৎ শক্তি সৌদি আরব এবং তুরস্কের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।
এখন যদি সত্যিই তুরস্ক প্রমাণ হাজির করতে পারে যে জামাল খাসোগিকে ইস্তানম্বুলে কনস্যুলেটের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে, তাহলে রিয়াদ-আঙ্কারা সম্পর্কের ওপর তার পরিণতি নিয়ে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
মার্ক লোয়েন বলছেন, হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক 'স্মরণকালের মধ্যে' সবচেয়ে মারাত্মক মোড় নেবে।
ক্যানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেসমা মোমানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সৌদি-তুরস্ক সম্পর্কে মারাত্মক সঙ্কট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তুরস্ক বলবে, তাদের মাটিতে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড তাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি অসম্মান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তদন্তে তুরস্কের অভিযোগ প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও তাদের মিত্র সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি প্রশ্নাতীত সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।
বেসমা মোমানি বলছেন, ওয়াশিংটনে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পরিণতি চিন্তা না করেই মোহামেদ বিন সালমান অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ক্যানাডার সঙ্গে ঝগড়া, সাদ হারিরিকে জোর করে আটকে রাখা - এসব ঘটনা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।"
ইস্তাম্বুলের সাংবাদিক হত্যার ঘটনা প্রমাণিত হলে মোহামেদ বিন সালমান সম্পর্কে সেই ধারণা ওয়াশিংটনে আরো প্রতিষ্ঠিত হবে।
সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষক জেমস ডর্সিও বলছেন জামাল খাসোগির অন্তর্ধান সৌদি-তুরস্ক সম্পর্কে বড় ধরণের অবনতি হবে।
তিনি বলেন, ইরান, কাতার, মুসলিম ব্রাদারহুড- এমন অনেক ইস্যুতে তাদের মতভেদ রয়েছে। সেই মতভেদ বাড়বে...তুরস্ক যদি প্রমাণ করতে পারে যে খাসোগিকে ইস্তানম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী।
ওয়াশিংটনে সৌদিপন্থী গবেষণা সংস্থা অ্যারাবিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক আলী শিহাবি বলেছেন, আগে থেকেই কোনো উপসংহারে পৌঁছানো ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, কেন একটি সরকার তাদের কোনো সমালোচককে তারই কনস্যুলেটের মধ্যে হত্যা করতে যাবে? তাছাড়া তুরস্ক কোনো নিরপেক্ষ পক্ষ নয়, পুরো গল্পের মধ্যে বিরাট ফাঁক রয়ে যাচ্ছে।
জামাল খাসোগিকে আটকে রাখা হয়নি - এটা প্রমাণ করতে ইস্তানম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সাংবাদিককে ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে।
তবে যেদিন খাসোগি সেখানে ঢুকেছিলেন, সেদিনের সিসিটিভির কোনো রেকর্ড নেই। যান্ত্রিক গোলযোগের যুক্তি দেখানো হয়েছে।