শিরোনাম
সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপে তৎপর ভারতীয় আমেরিকানরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে রাশিয়ার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ লুট করে নিল মুখোশ পরিহিতরা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 3 March, 2019 15:43

বিলীনের পথে প্রাচীন প্রাকৃতিক স্থাপত্য

বিলীনের পথে প্রাচীন প্রাকৃতিক স্থাপত্য
মেইল রিপোর্ট :

প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণপশ্চিমে চিলি ভূখণ্ডের ইস্টার আইল্যান্ডে রয়েছে মোয়াই উপজাতির ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যই ইস্টার আইল্যান্ডকে ইউনেসকোর তরফে এনে দিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা। কিন্তু পরিবেশের বদলে এই দ্বীপের সৌন্দর্য ক্ষয় হতে হতে পাথরে বদলে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভাস্কর্যের গায়ে একধরনের শৈবালের জন্ম পাথুরে কাঠিন্যকে অনেকটা মাটির মতো নরম করে দিচ্ছে। আর তাতেই মূর্তি ভেঙে ভেঙে পড়ছে।

বিশাল মুখমণ্ডল, উন্নত কপাল, টিকলো নাক, পুরু ঠোঁট। ১২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপাঞ্চলে বসতি তৈরি করেছিলেন মোয়াই উপজাতির মানুষজন। সেখানেই হাজার হাজার বছর ধরে বসবাস করেছে এই উপজাতি। পরবর্তী সময়ে তারাই এখানকার নুড়ি, পাথর এবং অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে নিজেদের মুখের আদল তৈরি করে। তা এত নিখুঁত যে একঝলক দেখে মনে হয়, জ্যান্ত। এই রকম অন্তত হাজার খানেক মূর্তি আছে।

এই ভাস্কর্যগুলোই পাশের বিস্তীর্ণ জলাভূমির কবল থেকে ইস্টার দ্বীপকে এতদিন সুরক্ষিত রেখেছিল। সবুজ পাহাড়ি এলাকায় এমন প্রাকৃতিক ভাস্কর্যের টানে ইস্টার আইল্যান্ড ভূপর্যটকদের এক প্রিয় দর্শনীয় স্থান। কিন্তু পরিবেশ বদলের জন্য সুন্দর স্থাপত্য ক্ষয়ের কবলে পড়েছে। শ্যাওলা খেয়ে ফেলছে কারুকাজ, সূক্ষ্মতা।

চিলির জাতীয় উদ্যান কর্পোরেশনের প্রধান তাহিরা এডমন্ডসের কথায়, ‘আমার মনে হয়, আগামী একশ বছরের মধ্যে মোয়াইরা একটা আয়তক্ষেত্র হয়ে যাবে। এই আদলটুকু ছাড়া আর তাদের কোনও স্মৃতিও থাকবে না।’

নৃতত্ত্ববিদ এবং ইস্টার আইল্যান্ডের বাসিন্দা সোনিয়া হাওয়া জানিয়েছেন, ‘কোনও যুগের উপর সময় এবং পরিবেশের প্রভাব কিছুতেই কাটানো যায় না, এটা স্বাভাবিক। তেমনই সেই যুগকেও নতুন করে ফিরিয়ে আনা যায় না। তার কিছু স্মৃতি ধরে রাখা যায় মাত্র, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের লোকজন ইতিহাসকে এসব দলিল চাক্ষুষ করতে পারেন।’

কিন্তু মোয়াই উপজাতির অনন্য স্থাপত্য কীর্তি চাক্ষুষ করার রোমাঞ্চ থেকে এবার বোধহয় বঞ্চিত হতে হবে সকলকেই।

মূর্তি এভাবে ক্ষয়ে যাওয়ার কারণ পুরোটাই প্রাকৃতিক। সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধিতে পাহাড়ি জমির সিক্ততা বাড়ছে, দ্বীপের ঘাসজমিতে স্থানীয় জীবজন্তুর চলাচল কমছে, ভূমি ক্ষয় হচ্ছে। দ্বীপে পানির ভাগ বাড়তে থাকায় জন্মাচ্ছে শ্যাওলা। সেই শ্যাওলাই মূর্তির গায়ে সাদা দাগ ফেলছে। সেইসঙ্গে শক্ত পাথরের প্রকৃতি বদল করে তা ভঙ্গুর করে তুলছে। ফলে তার আসল আকৃতি নষ্ট হয়ে, ভেঙেচুরে একটা চৌকো আকৃতি নিচ্ছে।

তবে এভাবে হারিয়ে যাওয়া থেকে এই ইতিহাসকে বাঁচানোর উপায়ও আছে। চিলির প্রকৃতি সংরক্ষকরা বলছেন, এক ধরণের রাসায়নিক দ্রবণ দিয়ে ওই স্থাপত্যগুলিতে জমা শ্যাওলা পরিষ্কার করা যায়। কিন্তু এটা তো কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। চিলি সরকার এই ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ বাঁচাতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত।

আর ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ইস্টার আইল্যান্ডে বেড়াতে যাচ্ছেন, তারা একেকটি মূর্তি নিয়ে যান নিজের দেশে। সেগুলিকে যথাযথ পরিবেশে রেখে যত্ন করুন। তাহলেই জীবন্ত জীবাশ্ম হয়ে থেকে যাবে মোয়াই উপজাতি। ইতিমধ্যেই দেড়শো বছর আগেকার একটি ব্যাসল্ট পাথরের তৈরি মূর্তি ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানকার সংগ্রহশালায় সেটি রাখা হবে।

চিলির গবেষকদের মতে, এভাবে বিশ্বের সেরা স্থাপত্যগুলি না হয় বাঁচানো গেল। কিন্তু প্রকৃতি থেকে সেই তো হারিয়েই যাচ্ছে ইস্টার দ্বীপের আসল আকর্ষণ।

উপরে