অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে কি আরেকটি যুদ্ধ আসন্ন ?
সৌদির দুই তেল স্থাপনায় হামলার দায় স্বীকার করেছে হুথি বিদ্রোহীরা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই হামলার জন্য সরাসরি ইরান দায়ী।
ইরান বলছে, হামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। তেল স্থাপনার ওপর নাটকীয় ওই হামলার পর পক্ষগুলোর মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ফের শুরু হয়েছে উত্তেজনা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিতে এ উত্তেজনা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেছেন, সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলার জবাব দিতে চায় তার দেশ। ইংরেজিতে তিনি একে বর্ণনা করেছেন এভাবে যুক্তরাষ্ট্র ‘লকড অ্যান্ড লোডেড’।
যুদ্ধের সময় বন্দুকে গুলি ভরে এবং তা সক্রিয় করতে এজাতীয় কমান্ড ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বিরাজমান। ইরান, কাতার, লেবানন, ফিলিস্তিন সংকট, ইয়েমেন যুদ্ধ- সবমিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি।
এর মধ্যে সৌদি হামলাকে ঘিরে আরেক যুদ্ধের ঢাক বাজতে শুরু করেছে। সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরব যে বিমান হামলা চালাচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের মদদ আছে। সৌদিকে যুদ্ধবিমান ও যাবতীয় রসদ সরবরাহ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। উপসাগরের আরও কয়েকটি দেশকে সঙ্গে নিয়ে রিয়াদ বহুদিন ধরে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রতিপক্ষও যে পাল্টা হামলার ক্ষমতা রাখে, সৌদি তেল স্থাপনার ওপর এই আঘাত তারই প্রমাণ। তবে ড্রোন হামলার ঘটনা সেই পুরনো বিতর্ককে আবার উসকে দিয়েছে- হুথি বিদ্রোহীদের ইরান কি পরিমাণ সামরিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এমনিতেই অস্থিতিশীল। সেখানে এই সর্বশেষ ঘটনা যেন পুরো অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে।
কিন্তু এ হামলা একই সঙ্গে ইরানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি এবং কৌশলের ব্যর্থতাও ফুটিয়ে তুলেছে। সৌদি তেল স্থাপনায় হামলার ব্যাপারে নানা দাবি এবং পাল্টা দাবির মধ্যে অনেক তথ্য এখনও অজানা।
হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের বিভিন্ন টার্গেটে আগেও ড্রোন এবং মিসাইল হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ড্রোন হামলা থেকে তারা খুব সীমিত সাফল্যই পেয়েছে।
তবে এবারের যে হামলা সেটা এমন মাত্রার যে তার সঙ্গে আগেরগুলোর কোনো তুলনাই চলে না। বহুদূর থেকে যেরকম ব্যাপক মাত্রায় যে ধরনের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে, তার নজির নেই।
মিসাইল না ড্রোন
এ হামলার ব্যাপারে আরেকটি প্রশ্নের উত্তর অমীমাংসিত। হামলায় কি ‘আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল’ (ইউএভি) ব্যবহার করা হয়েছে, নাকি নতুন কোনো ধরনের মিসাইল। যদি মিসাইল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সৌদি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেন তার সংকেত পেল না।
আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, হামলার পেছনে ইরাকের কোনো ইরানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠী ছিল, নাকি স্বয়ং ইরানই জড়িত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও কিন্তু কোনো সময় নষ্ট না করে সরাসরি তেহরানের দিকে আঙুল তুলছেন এ ঘটনার জন্য। ঘটনার ব্যাপারে কোনো গোয়েন্দা তথ্যের জন্য তিনি অপেক্ষা করেননি।
কয়েক ঘণ্টা পর অবশ্য মার্কিন সূত্রগুলো দাবি করতে থাকে মোট ১৭টি স্থানে এই ড্রোন হামলা হয় এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই এসব হামলা হয়েছে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। যুক্তরাষ্ট্র বলতে চাইছে এই হামলা হয়েছে ইরান বা ইরাকের দিক থেকে, দক্ষিণের ইয়েমেন থেকে নয়।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে তারা এ হামলার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য জানাবে। হামলায় ব্যবহৃত যেসব ড্রোন টার্গেট পর্যন্ত যেতে পারেনি, সেগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে।