ভালো থেকো মা......
॥ সরদার বদিয়ার॥
সেদিন আকাশটা এমন আলো ঝলমল ছিল না। হাওয়ায় দুলছিল ধুসর কালো মেঘেরা। ধরণী আলো-আঁধারের খেলায় মেতেছিল। মৃদুমন্দ হাওয়া বইছিল। তখন দুলে উঠা মেঘেরা অঝরে কাঁদেনি। মাঝে মধ্যে অশ্রু বিসর্জন করছিল। বর্ষার জলে মায়ের দেহমন সিক্ত হয়েছিল। শরীরটা শিরশির করে উঠল। কোনো শঙ্কায় মনটা আমার উতালা ছিল।
কয়েকদিন ধরে মা আমার খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। হলদে রাঙা শরীরটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। রাঙা ঠোঁটের সেই হাসিটা কেমন মলিন হয়ে পড়েছিল। মা হাসলে গালে টোল পড়তো। সেই হাসিমাখা মুখে তখন দ্যুতি ছড়িয়ে পড়তো।
মায়ের সেই হলদে রাঙা রংটা আমরা কেউ পায়নি। তবে ঝুমা কিছুটা পেয়েছে। বিশেষ করে হাসিটা। হাসলে ওর গালেও টোল পড়ে। দাদু-দিদার আদর যত্ন ও-ই একা পেয়েছে। খুব কেঁদেছিল ঝুমা। মাকে ও আপু বলে ডাকতো। এখন কি ওর আপুর কথা তেমন করে মনে পড়ে?
আমার মার ক্যান্সার হয়েছিল। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, আর মাত্র তিন মাস। মা জনতেন না। একটা দিন চলে যেত-মাকে হারাতাম একদিন। নিশ্চিত মৃত্যুর প্রহরে আমরাও কষ্ট পাচ্ছিলাম।
চিকিৎসকের কথায় বিশ্বাস করে ৮৮ দিনের মাথায় এই দিনে (১৯৯৯ সালের ২৫ জুন) মাকে নিয়ে যাওয়া হয় গাঁয়ের বাড়িতে। মাকে রওনা করিয়ে দিয়ে... মনটা বিষণ্নতায় ভরে উঠেছিল।
শহরের বাসায় তখন একা আমি। বন্ধু মিলন আমাকে অনেকক্ষণ সঙ্গ দিয়েছিল। আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলাম না। মনটা কি কিছু আঁচ করতে পেরেছিল!
উদভ্রান্ত মন নিয়ে পত্রিকা (সাতক্ষীরা চিত্র) অফিসে। কাজে মন বসছিল না। রাত আটটা কি সাড়ে নয়টা। আমার এক চাচাতো ভাই (খোকন) হঠাৎ অফিসে। তাকে দেখেই মনটা কেঁদে উঠল।
বললাম মায়ের খবর বলো? ও বললো তোর মা ভালো আছে। তবে শরীরটা একটু খারাপ। তোকে দেখতে চেয়েছে। বাড়ি যেতে হবে। বাড়ি পৌঁছে দেখি, মায়ের নিথর দেহ সাদা চাঁদরে মুড়িয়ে রাখা।
আজ ২১ বছর ওই দূর আকাশে তারা হয়ে জ্বলজ্বল করছে আমার মা। মায়ের ডাক নামও ছিল তারা মণি।
অনেকদিন নীল আকাশে মা একা ছিল। এখন বাবাকেও পেয়েছে। তোমরা ভালো থেকো......
লেখক: সরদার বদিয়ার, সাংবাদিক