শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 13 April, 2018 02:33

অরক্ষিত উপাচার্যগণ ও ষড়যন্ত্রের প্রথম অঙ্ক

অরক্ষিত উপাচার্যগণ ও ষড়যন্ত্রের প্রথম অঙ্ক
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান :

গত রবিবার দিবাগত রাত এক থেকে দেড়টার মধ্যে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছত্রছায়ায় একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এক নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। তারা যে কী তাণ্ডব চালিয়েছে, তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না। দুর্বৃত্তরা উপাচার্য ভবনের প্রতিটি কক্ষের প্রতিটি জিনিসই শুধু ভাঙচুর করেনি, উপাচার্য ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত পোশাক ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট করেছে, টিভি ফ্রিজ ভেঙেছে; কিছু আসাবাবপত্র বাইরে নিয়ে তাতে অগ্নিসংযোগও করেছে। যাওয়ার সময় ফ্রিজে রাখা মাছ মাংসও নিয়ে গেছে। তাণ্ডব শেষ হলে বাড়িটির যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে বাড়িটিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার কোনও একটি বাড়ি বলে অনেকে ভুলও করতে পারেন। কিছু গণমাধ্যমকর্মী যদি মানবঢাল হয়ে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের রক্ষা না করতেন, তাহলে ওই রাতই হতে পারত তাদের জন্য শেষ রাত।
আমার নিজের জীবনে অনেক আন্দোলন করেছি, আন্দোলন দেখেছি, আন্দোলনের কথা পড়েছি বা শুনেছি। কিন্তু কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঐতিহাসিক বাসভবনটিতে কেউ একটি ঢিল মেরেছে বলে শুনিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইটে’র মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে, সেই রাতে তাদের প্রথম টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল, তা ছিল ভয়াবহ। কিন্তু তারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে কোনও হামলা করেনি। বলতে হয়, রবিবারের হামলাকারীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে।
কোটা সংস্কারের জন্য যারা গত কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করছে, তারা বলেছে এই হামলাকারীরা অনুপ্রবেশকারী। এই ধরনের আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থাকতে হয় এবং তাদেরই দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করতে হয়। এমন নেতৃত্ব না থাকলে যেকোনও আন্দোলন একটি উচ্ছৃঙ্খল মানুষের সমষ্টি হতে পারে এবং এর ফলে আন্দোলন বিপথে চলে যাওয়ার বা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অন্য আরেক গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ উদ্ধারে তৎপর হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে, এটি নির্বাচনের বছর। যতই দিন যাবে, ততই সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য বিভিন্ন সুবিধাবাদী গোষ্ঠী পরিস্থিতির সুযোগ নেবে। আরও দুঃখের বিষয় হবে যখন যেসব ব্যক্তি বা সরকারি সংস্থা এতদিন সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আদায় করে নিয়েছে, তারা ‘দেখি কী হয়’ অবস্থানে চলে যাবে। এই ক্ষেত্রে ঠিক তা-ই হয়েছে বলে মনে হয়।
বলা যেতে পারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে রবিবার দিবাগত মধ্যরাতের হামলা আসন্ন ষড়যন্ত্রের একটি সফল মঞ্চায়ন। কেউ কেউ অনেকদিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লাশ প্রত্যাশা করছিল। সেই রাতে একাধিক লাশ পড়ার সম্ভাবনা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যেকোনও সময় ডজনখানেক পুলিশ থাকে। শনিবার থেকে ক্যাম্পাসে অসংখ্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যও ছিলেন ক্যাম্পাসে। তারপরও সময়মতো কেন তারা উপাচার্যের বাসভবন রক্ষা করতে পারলেন না— সেই প্রশ্ন তো করা যেতেই পারে।
যেকোনও দেশে উপাচার্য তো বটেই, একজন প্রাথমিক শিক্ষককে যে মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া উচিত, বাংলাদেশে এক শ্রেণির শিক্ষার্থীর কাছে তেমনটিও আশা করা যায় না; যা জাতির এক দুর্ভাগ্য। একজন শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কেমন হতে পারে, তা অনেকবার দেখিয়েছেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমার নিজেরই একাধিকবার তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। তার কাছ থেকে এই সামান্য গুণটুকু শেখার জন্য আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ার প্রয়োজন নেই। ঠিক একইভাবে বঙ্গবন্ধুও শিক্ষকদের সম্মান করতেন।
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একদল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র উপাচার্যের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা আমার প্রজন্ম চিন্তাই করতে পারে না। যদিও আমাদের প্রজন্মের অনেকেই ১৯৫৯ সালের ছাত্র আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের রাজপথের সৈনিক ছিল। সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ছিলেন ড. ওসমান গনি (বিএনপি নেতা ড. ওসমান ফারুকের পিতা)। উপাচার্যরা তখন কদাচিৎ শিক্ষার্থীদের সামনে আসতেন। ড. ওসমান গনি আইয়ুব খানের গভর্নর মোনায়েম খানের গুণ্ডাবাহিনী এনএসএফকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় দিয়ে রাখতেন এবং প্রয়োজনে ছাত্রলীগ আর ছাত্র ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতেন। তাদের বিরুদ্ধেও অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু কখনও আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের ওপর চড়াও হয়নি বা তার বাসভনে একটি ঢিলও ছুঁড়েনি। উপাচার্যের বাসভবনে তখন তার অফিসও ছিল এবং বাড়ির সামনে কখনও পুলিশ দেখা যায়নি। সার্বক্ষণিক দুয়েকজন দারোয়ান বাড়ি পাহারা দিত।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনের ক্ল্যারিজেস হোটেলে অবস্থান করছিলেন, কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে দেখেন রাস্তায় কিছু লোক একজন মানুষকে লাঞ্ছিত করছে। তিনি তার সঙ্গে থাকা একজন কর্মকর্তাকে নিচে পাঠালেন। কিছুক্ষণ পরে সেই ব্যক্তিকে ওপরে নিয়ে আসা হয়। দেখেন, সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, স্বয়ং ড. ওসমান গনি। বঙ্গবন্ধু এই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে তাকে তার কক্ষে বসিয়ে রেখে পরিস্থিতি শান্ত হলে নিজ বাসায় পাঠিয়ে দেন। শিক্ষক বা গুরুজনদের শ্রদ্ধা করার বিষয়টি শিখতে হয় পরিবার থেকে, বর্তমান সময়ের অধিকাংশ পরিবার এটি শেখানোর প্রয়োজনই মনে করে না। শিক্ষক বা গুরুজনদের সঙ্গে অসৌজন্যমূল আচরণ করাকে এদের অনেকই স্মার্টনেস মনে করে।
বাংলাদেশে ছাত্রনামধারী ব্যক্তিদের হাতে উপাচার্য বা শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার সূত্রপাত খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে যখন একটি মৌলবাদী ছাত্রসংগঠন দাবি তুললো— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট কর্তৃক সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত (৭১ ভোট) উপাচার্য ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিনকে পদত্যাগ করতে হবে। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য তার ভবনের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। উপাচার্য ভবনকে ‘সাব জেল’ ঘোষণা করে তাকে সপরিবারে সেখানে আটকে রাখা হয় ১২ দিন। বাসভবনের সামনে মাইক লাগিয়ে তাকে সার্বক্ষণিক অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করার ব্যবস্থাও করা হয়।
ওই সময় খালেদা জিয়া সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে তাকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন ‘ছাত্র’দের দাবি অনুযায়ী পদত্যাগ করেন। এইসব মানুষ যখন কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, এর চেয়ে ভণ্ডামি আর কিছুই হতে পারে না। বলাবাহুল্য, উপাচার্য পদত্যাগ করতে অস্বীকার করলে তাকে ১৮৯৭ সালের ‘জেনারেল ক্লজেস’ আইন দ্বারা অপসারণ করা হয়।
খালেদা জিয়া তার শাসনামলে মোট ১১ জন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করেছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম ও রুহুল কবির রিজভীরা তা কি স্বীকার করবেন? মির্জা ফখরুল ইসলাম সোমবার বলেছেন, ‘আমরা সরকারে গেলে কোটার নামে অবিচারের অবসান ঘটাবো।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম একসময় কলেজ শিক্ষক ছিলেন। মনে করতাম, তার কিছু বিদ্যা-বুদ্ধি আছে। এখন মনে হচ্ছে, তিনিও রিজভী আহমদের দলে ভিড়ে গেছেন। অবশ্য রাজাকার আর আলবদরদের জন্য যদি কোটা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেন, তা অন্য কথা। খালেদা জিয়া দুই দফায় পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। তখন মির্জা সাহেবরা তা করেননি কেন?
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য অনেকটা তার নেত্রীর পদ্মা সেতু নিয়ে করা মন্তব্যের অনুরূপ। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির জিগির তুললো, তখন বেগম জিয়া বেশ স্টাইল করে বললেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে পদ্মা সেতু হবে না। আমরা ক্ষমতায় গেলে দু’টি পদ্মা সেতু বানাবো।’ আবার যখন তিনি দেখলেন যে শেখ হাসিনা শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেই ফেলছেন; তখন বললেন, ‘জোড়াতালি দিয়ে এই সেতু বানানো হচ্ছে। কেউ এই সেতুতে উঠবেন না।’
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে যারা উপাচার্য হন, তাদের অনেককেই সার্বক্ষণিক বিপদের মধ্যে থাকতে হয়। আগেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কথা বলেছি। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি নিজে সাড়ে চার বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছি। ওই সময় মৌলবাদী একটি ছাত্র সংগঠন অন্তত তিনবার আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে। একবার আমার নিজ বাড়িতে মধ্যরাতে বোমা হামলা করেছে। একই ছাত্র সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবদুল খালেকের সরকারি বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেকের বাসভবনেও কিছু উচ্ছশৃঙ্খল ছাত্র অগ্নিসংযোগ করেছিল। কিছুদিন আগে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুনুর রশিদ আসকারি ঢাকা থেকে সড়ক পথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে ফিরছিলেন। গভীর রাতে ক্যাম্পাসের কাছে তার গাড়ি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তিনি কোনোরকমে দৌড়ে পাশের জঙ্গলে প্রবেশ করে রক্ষা পান। ওই এলাকায় সর্বহারাদের উৎপাত আছে বলে স্থানীয়দের কাছে জানা যায়। একই কারণে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও দীর্ঘদিন তার সরকারি বাসভবনে থাকতে পারেননি।
সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে নির্বাচনের বছরে যেকোনও উপায়ে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার জন্য যেকোনও সময় তাত্ত্বিক বাম, তামাদি বাম, রোমান্টিক বাম, জামায়াত-বিএনপি, এক শ্রেণির সুশীল ব্যক্তি আর মিডিয়া একত্রিত হবে এবং ওভারটাইম কাজ করবে। অতীত ইতিহাস তাই বলে। এইসবের বিরুদ্ধে কথা বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও টকশোকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীরা এক স্বরে বলবেন— বেটা চাটুকার, সরকারের দালাল। আবার কেউ কেউ বলবেন দলদাস। কিন্তু নিজেরা কখনও নিজেদের দিকে তাকান না। ১/১১-এর আগে যারা মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন, ১/১১-এর পর তাদের কেউ কেউ হয়ে গেলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, কেউ ছুটলেন রাষ্ট্রদূত হয়ে বিদেশে, আবার কয়েকজন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এক-এগারোর কুশীলবদের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ হতে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলার কাজে।
নির্বাচনের বছরের ষড়যন্ত্রটা শুরু হয়েছিল কিছু শিক্ষকের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনের নামে শয্যা পাতার মধ্য দিয়ে। শেষটা কোথায়, তা সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ভালো জানে। তবে এসবের মোকাবিলা করতে হলে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আরও সতর্ক হতে হবে। তার চারপাশে যারা সার্বক্ষণিক তাকে ঘিরে রাখেন, তাদের ভূমিকা যে সবসময় সঠিক ও স্বচ্ছ হবে তা চিন্তা না করাই মঙ্গলজনক।
কোটা নিয়ে দু’টি কথা। বিশ্বের অনেক দেশে বিভিন্ন ধরনের কোটা আছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক সৈনিকদের জন্য চাকরিতে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কোটা পদ্ধতি চালু আছে। ভারতে তামিলনাড়ুতে ৬৯ শতাংশ চাকরি বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত। আবার সেই দেশের উচ্চ আদালত বলে দিয়েছে— চাকরিতে ৫০ শতাংশের বেশি পদ সংরক্ষিত থাকতে পারবে না। তামিলনাড়ু তাদের রাজ্যেও আইন দ্বারা বাড়তি কোটা রেখেছে। মহারাষ্ট্রে কোটা বাড়ানোর জন্য বহুদিন আন্দোলন চলছে। মালয়েশিয়া ভূমিপুত্র না হলে সরকারি চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
বাহাত্তরের সংবিধানে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু পনেরটি আসন সংরক্ষণ করেছিলেন। পরে তা ৫০টিতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে যেই কোটা নিয়ে এত সংঘাত, তা তো পর্যালোচনা হতেই পারে এবং হওয়াও উচিত। কিন্তু তাই বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রাণনাশের চেষ্টা করতে হবে কেন? কোটার সঙ্গে তার বা তার পরিবারের তো কোনও সম্পর্ক নেই। সরকার এরই মধ্যে বলেছে, কোটায় কাউকে উপযুক্ত পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এটি তো একটি যৌক্তিক ব্যবস্থা। আর সরকার যখন অঙ্গীকার করেছে, তখন সরকারের ওপর আস্থা রাখা উচিত। বর্তমান সরকার কথা দিয়ে কথা রাখেনি তেমন তো নয়।
প্রধানমন্ত্রীর চোখে এই লেখা পড়বে কি না, জানি না। তবে বলতে পারি, নির্বাচনের বছরে প্রত্যাশিত ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। আগামীতে আরও হবে। তা মোকাবিলা করার জন্য এখনই কৌশল নির্ধরণ করা জরুরি। একইসঙ্গে সরকারের সভা পারিষদদের আরও সতর্ক হতে হবে।

 


লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক। সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

উপরে