শিরোনাম
সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপে তৎপর ভারতীয় আমেরিকানরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে রাশিয়ার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ লুট করে নিল মুখোশ পরিহিতরা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 6 July, 2018 19:43

কী প্রভাব ফেলবে ট্রাম্পের কঠোর ইরান নীতি ?

কী প্রভাব ফেলবে ট্রাম্পের কঠোর ইরান নীতি ?
লিন্ডা এস হার্ড :

হায়, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রতিশ্রুত বৈরিতা অবসানের সেই দিনগুলো থেকে ইরানের ভাগ্য কীভাবে বদলে গেছে! খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বহু বিলিয়ন ডলার চুক্তির পসরা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাজধানীগুলোতে উৎসবমুখর সফর করেছিলেন।
 
তীব্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বাদ দিলেও লেবানন, ইয়েমেন ও ইরাকে ইরানি প্রশাসনের সশস্ত্র ছায়াযুদ্ধ, সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ এবং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন, এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী নীতির পরও ওবামা ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তেহরানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিরিয়ে আনার পথ উন্মুক্ত করেছিলেন।

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিপরীতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজে মনোভাব নিয়ে তৈরি করা চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয়েছিল ইরানকে। যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত পর্যায়ে নিয়ে আসার পাশাপাশি পরমাণু কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করতে পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা- আইএইএ’র জন্য দরজা খুলে দেয়ার শর্ত যুক্ত ছিল।

নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ‘পচা ও ক্ষয়িষ্ণু’ বলে চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর চুক্তি স্বাক্ষরকারী সব দেশ এর তিক্ত বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য ছিল ইরান চুক্তির কঠোর শর্তাবলি মেনে চলছে। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা পুনরারোপ করেছে, যা আগস্ট মাস থেকে কার্যকর হবে। একইসঙ্গে ইরানের ব্যাংকিং ও তেল খাতকে টার্গেট করে নভেম্বর মাস থেকে নতুন আরেকটি নিষেধাজ্ঞা জারি হতে যাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা কতগুলো পদেক্ষেপের একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করতে যাচ্ছে, যাতে করে ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির মধ্যকার চুক্তিটিকে কার্যকর রাখা যায়। এসব পদক্ষেপের একটির লক্ষ্য হচ্ছে দ্বিতীয় পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও ইরানের সঙ্গে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসা যেন রক্ষা করা যায়। এগুলো এখনও আলোচনার মধ্যে রয়েছে।

যা হোক, কঠোর সাজার অবয়বে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র ক্রোধের বিষয়টি অনুমান করে সত্যিকারার্থে উদ্বিগ্ন বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কিছু কোম্পানি ইরানের সঙ্গে নিজেদের চুক্তি শেষ করে ফেলতে খুব বেশি সময় নষ্ট করেনি। আরও কিছু কোম্পানি তেহরানে নিজেদের কার্যক্রম সীমিত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ইরানের তেল আমদানি স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নির্দেশনা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তুরস্ক। গত মাসে রাশিয়া ও চীন শত শত কোটি ডলার সমমূল্যের বেশকিছু চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইরানের সঙ্গে। কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের পর থেকে কাতারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। এটি হচ্ছে এমন এক মৈত্রী যার ঠিক বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছে বেশিরভাগ জিসিসিভুক্ত (উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা) দেশ।
 
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, তার দেশ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পারে। এমনটি হলে তেহরান ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু করবে।

মিত্রদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এককভাবে ইরানের অর্থনীতিকে নতজানু করতে পারবে না; কিন্তু অনাস্থার পরিস্থিতি ও বিভিন্ন নির্দেশনা বলছে সবকিছু সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ সামান্য বিষয়। ইরানের মুদ্রা রিয়ালের দর পড়ে যাচ্ছে, এতে ইরানি জনগণ বিদেশি মুদ্রার দিকে ঝুঁকছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে এবং উচ্চ বেকারত্বের হার বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে অস্থিতিশীলতার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

গত সপ্তাহে হাজার হাজার ইরানি তেহরানের গ্র্যান্ড বাজারের আশপাশে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। অনেকে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। নগরীর প্রধান প্রসিকিউটর বলছেন, ‘বহু আন্দোলনকারী’কে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ট্রাম্পের কিছু পরামর্শক ও মিত্র ইরানে প্রশাসন পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে আছেন নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুবি গিউলিয়ানি ও সাবেক হাউস স্পিকার নিউট গিনরিচ। তারা উভয়ে এ ক্ষেত্রে বৃহদাকারে এগিয়ে না আসায় ইউরোপীয় মিত্রদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনি এ সংক্রান্ত বার্তা পেয়েছেন। জনগণ ও তাদের সরকারের মাঝে অনৈক্যের বীজ বপনের চেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দূরত্ব তৈরি করছে বলে শনিবার ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।

যদি ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের চূড়ান্ত লক্ষ্য হয় ইরানের প্রশাসনে পরিবর্তন আনা, তবে সে সম্ভাবনা খুব একটা নেই। ১০ বছরের কঠোর নিষেধাজ্ঞার অচলায়তন অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণে হলেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে সরানো যায়নি। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞাও প্রিয় নেতা থেকে জনগণের উৎসাহ কমানোর জন্য কিছুই করতে পারেনি, যদিও ওই সময়েই অনেক গ্রামীণ মানুষকে বাধ্য হয়ে ক্ষুধার্ত থাকতে হয়েছিল।

একনায়কসুলভ নেতৃত্ব নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য গড়ে তোলার আগে বিদ্রোহ দমন করার জন্য সহিংস কৌশল প্রয়োগ করে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সামনের মাসগুলোতে ইরানিরা যে ধরনের কষ্টই ভোগ করুক না কেন, আনুগত্যশীল ও শক্তিশালী রেভ্যুলেশনারি গার্ডসহ ইরানি সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিয়ে দেশজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ ও ইরানি বিপ্লবের মতো ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি।

যতক্ষণ পর্যন্ত ইরানি প্রশাসন আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য বাধ্য হবে এবং পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধকারী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৯২৯ নং প্রস্তাব মেনে চলার প্রতি অনুগত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তেহরান আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আরও বেশি হুমকি হয়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

(অনুবাদকৃত)

 

লেখক : পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ রাজনৈতিক কলামিস্ট ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক

উপরে