প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে করণীয়
সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ঝরে পড়া একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুরা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পাঁচ বছরমেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাচক্র শেষ হওয়ার পূর্বে মধ্যবর্তী যে কোনো সময়ে যে কোনো শ্রেণি থেকে যদি বিদ্যালয় ত্যাগ করে লেখাপড়া ছেড়ে দেয় তখন তাকে ঝরে পড়া বলে। ঝরে পড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় রয়েছে।
এসব বিষয়গুলোর মধ্যে অভিভাবকের অসচেতনতা, দারিদ্র্যতা, শিশুর যত্নের ঘাটতি, মেয়ে শিশুকে শিক্ষা না দেয়ার প্রবণতা, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, অসুস্থতা, ভাষার সমস্যা, বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, দুর্বল শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাক্রমের অসংগতি, বিদ্যালয়ের সময়সূচি, বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি, সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম, বিদ্যালয়ের দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা, নিষ্ক্রিয় এসএমসি, শিক্ষক অভিভাবক সম্পর্ক, বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ঝরে পড়া রোধ করার জন্য স্থানীয় জনসমাজের সম্পৃক্ততা অতীব জরুরি। বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে যেসব বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায় সেগুলো হলো- শিশু জরিপ, শতভাগ ভর্তি, ছাত্র ও শিক্ষকের নিয়মিত উপস্থিতি, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ, বিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, প্যারা শিক্ষক ও বিষয় পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগ, স্থানীয়ভাবে উপকরণ সংগ্রহ ও তার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা, মা সমাবেশ ও অভিভাবক সমাবেশ, স্লিপ স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সভার আয়োজন করা ইত্যাদি।
ঝরে পড়া রোধে সমাজ সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা হচ্ছে- অভিভাবকদের সচেতন করা, শিশুদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা, দরিদ্র শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ, স্কুলড্রেস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা, বিদ্যালয়ে খেলাধুলাসহ নিয়মিত সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ রাখা, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, বিষয় বিশেষজ্ঞ প্যারা শিক্ষকের ব্যবস্থা করা, গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, মিড-ডে মিল বাস্তবায়ন করা, ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা, মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া, বিদ্যালয়ের জন্য সম্পদ সংগ্রহ করা ও তা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা, নিয়মিত বিদ্যালয়ের খোঁজখবর রাখা।
সর্বোপরি ‘আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব’ এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের একজন অংশীজন হিসেবে সব কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। এককথায় বলা যায় ব্যক্তি, সমাজ, জাতি তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত ও গুনগতমান উন্নয়ন এবং ঝরে পড়া রোধে রাষ্ট্রের সব শক্তি ও সামর্থ্য কাজে লাগাতে হবে।
উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়ারোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী।