দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স বনাম বাংলাদেশ
এন সি রায়: আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, “এমন দেশটি কোথায়ও খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি,” কবি নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসীবাংলা” বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর মুখ দেখিতে চাহিনা আর’ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কবি সাহিত্যিক বাংলার অপরুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন, অনেক মন্তব্য করেছেন বা ভাবাবেগ ব্যক্ত করেছেন। হৃদয়াকৃষ্ট এসব কবিতা, গান, প্রবন্ধ শৈশব থেকেই এগুলি মন ও প্রানের সংগে জড়িয়ে একাকার হয়ে আছে । ফলশ্রুতিতে অন্য কোন দেশের বৈচিত্রময়তা মনকে তেমন একটা আকৃষ্ট করলেও স্পর্শ করতে পারেনা। নায়েগ্রা জলপ্রপাতের মত অপরুপ সৌন্দর্য, রসতশুভ্র তুষারাবৃত বিস্তৃর্ন প্রকৃতি, পাহাড়ের সাথে সাগরের দুরন্তপনা, নীলাম্বরের সাথে নীল সাগরের মাখানাখি এসব কোন কিছুই যেনো নিজ জন্মভূমিকে ভিদে করতে পারে না। নিজের মা যেমন শ্রেষ্ঠ তাঁর সন্তানের নিকট , তাঁর থেকে অন্য কেহ মহান হতে পারেনা। তেমনি দেশ ও জন্মভূমি সবচেয়ে মহান ও গরীয়সি । এ প্রসঙ্গে চরম ও পরম সত্য একটি বিষয় মনে এসে গেলো সেটি হ’ল, মা’ যদিও কোনও সময় তাঁর প্রিয় সন্তানকে প্রত্য্যাখ্যান করেন বা কঠিন সময়ে এটি করতে্ হয় তখন মা নামের মাটি অর্থাৎ ধরিত্রী মাতা সন্তানকে তার বুকে ঠাঁই দেয়। সেই ধরিত্রী কখনোও অসুন্দর হয়না। সেই জন্মভূমির চেয়ে কোনকিছুই বড় হতে পারে না। চাইতে ব্যাকুল হয়ে গাইতে ইচ্ছে করে- ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়।
শিরোনামের দিকে যাওয়া যাক। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স! খুবই সময়োচিত সিদ্ধান্ত। কিন্তু এমনটি যেনো না হয়, যেখানে পুরো দুর্নীতির সংগাকেই পাল্টে দিতে হয়। অর্থাৎ এমেন্ডমেন্ট করে দু্র্নীতি কে নীতি বা সুনীতি করা হলে নির্বাচনী কমিটমেন্টও রক্ষা হবে অন্যদিকে কোন কষ্টও করতে হবেনা। নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা তো এ সরকারের আছেই; সংসদে কোন এক সাংসদ প্রস্তাবটি উত্থাপন করলেই হলো যে, “আজ থেকে বাংলাদেশের মানুষের নীতির সঙ্গা দু্র্নীতির সঙ্গার সাথে ফ্লিপ করতে হবে। আমাদের দলের নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষায় এর থেকে সহজ উপায় আর নেই। তাহলে সাপও মরবে লাঠিও ভাংগবে না।” ব্যচ! হয়ে গেলো ! তবে স্বাধীনতার পক্ষের দলতো এরকম কিছু করতে্ পারবে না! কিন্তু ভয় হয় এই দলটির সেই পুরাতন ঐতিহ্য নিয়ে। পুর্বের আওয়ামী লীগ আর ইদানীং কালের আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে তো! আরে বা! কি ভাবছি আমি! কিভাবে শুরু করে আবার কোন দিকে চলেছি। আসলে সব কিছুর মধ্যে যেনো কেমন একটা মিশ্রন তো, তাই লেখার মধ্যেও তার প্রভাব এসে পড়ে। চলুন ফিরে যাই পূর্বের ধারাতে। একটা দেশ বা রাষ্ট্র বলতে্ একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড অবশ্যই সবচেয়ে বড় উপাদান কিন্তু অন্যান্য উপাদান গুলিও কম গুরুত্বপুর্ণ নয়। নির্দিষ্ট ভূখন্ডের ব্যপারে যে কবি, সাহিত্যিক ও বিশেষ মহাপ্রাণ ব্যক্তিগণের মন্তব্য বা ভাবাবেগ আরো বেশী হলেও কোন ক্ষতি নেই বরং তাতেও এই দেশের এই উপাদানকে কম বিশেষায়িত করা হবে । মা ধরিত্রীর এই অংশটি এই দেশের জনগোষ্ঠিকে পরম্পরায় যা দিয়ে আসছে সেই অনুপাতে কয়েকজন মাত্র গুণীব্যক্তি এর প্রশংসা করেছেন।
এই দেশ এই ভূখন্ড সর্বোপরি জন্মভূমি সম্বন্ধে কোটি কোটি লেখক কবিরাও যদি লেখেন তা হলেও আমার ধারনায় কম হবে। দেশের বা রাষ্ট্রের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম ‘জনগোষ্ঠী’ । এই জনগোষ্ঠি দেশের ভূখন্ডের প্রকৃতির মত নি:স্পাপ (innocent) ! জনগোষ্ঠীকে আমি মনে করি কমলমতি শিশুর মত । তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ কারো থাকার কথা নয়।কারণ একটা দেশের সরকারব্যবস্হার উপরেই এই জনগোষ্ঠী গড়ে উঠে। যেমন পরিবারে সন্তান বেড়ে উঠে। অন্যদুটি উপাদানের নাম হলো ‘সার্বভৌমত্ব’ ও সর্ব শেষ উপাদানটি হলো ‘সরকার’ । সার্বভৌমত্ব হলো কোন দল কর্তৃক নির্ধারণ করা কিছু স্তম্ভ বা মূলনীতি (লক্ষ্য বা আদর্শ ) যার উপর ভর করে সরকার দেশ পরিচালনা করতে্ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। এই ‘সার্বভৌমত্ব’ কি , তা নির্বাচনের আগেই জনগনের সমক্ষ্যে দৃশ্যমান থাকে। জনগন সেই অনুযায়ি দল পছন্দ করে ও নির্বাচিত করে। এখন আসুন ‘সরকার’ সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করা যাক। সরকার এমন সুন্দর সুন্দর উপাদান গুলি নিয়ে একটা দেশকে স্বর্গ বানাতে পারেন এবং সকল জনগোষ্ঠীর জন্য পারেন সেই বেহেস্ত উপহার দিতে।
সেদিন একজন নব নিযুক্ত মন্ত্রীর কথা শুনছিলাম। মুলত তাঁর কথার উপরই উদ্দেশ্য করে আমার আজকের এই সামান্য লেখার প্রায়াস।তিনি কোন এক সভায় বলছিলেন, “আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। কর্নফুলি নদীর পাশে যে অবৈধ স্থাপনা আছে আমি তাহা উচ্ছেদ করবো। কোন রকম দুর্নীতি করবো না। দুর্নীতি করার পূর্বে যেনো আমার মৃত্যু হয়।” বাহ কি সুন্দর চমৎকার কথা ও মানসিকতা! আমার মস্তক অবনত করে ওই দিনেই তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়েছি। এই মানসিকতা তাঁর অন্তরে অটুট থাকুক এই প্রার্থনা করি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট। এখন প্রশ্ন হলো ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট্য মন্ত্রী পরিষদ, তাঁরা সকলেই কি ওই মন্ত্রীর মত প্রতিজ্ঞাবদ্ধ? মন্ত্রী পরিষদে আগে দুর্নীতি মুক্ত হবে কিনা এটা বড় বিষয়। দেশ বলতে নির্দিষ্ট ভূখন্ড বোঝালে সে তো দুর্নীতি মুক্তই, সেখানে সরকারের কোন কিছুই করার নেই। সেখানে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে আপনারা বৈতরনী পার পেতে পারেন। আর দেশ বলতে সকল উপাদান সম্বলিত রাষ্ট্র বোঝালে, তাহলে সরকারকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে । সাগর নিস্কাসনের মত কঠিন সংকল্প নিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রীর এই কথাটি অত্যান্ত যুক্তি যুক্ত; তিনি বলেছেন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে , এখন দুর্নীতি করতে হবে কেনো? হ্যাঁ, মন্ত্রী, সচীব সরকারী, বেসরকারী সকল ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে সুতরাং উৎকোচের কি প্রয়োজন ? এখন আর নুন আনতে্ পান্তা ফুরানোর অবস্হা নেই।তবে দুর্নীতি করতে হবে কেনো? বেশ কিছু জায়গা আছে সেসকল জায়গায় কি হবে? অনেক যায়গা পরিস্কার করতে হবে তা হলো বেকার জন গোষ্ঠি, তাদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা বেকার জন গোষ্ঠি, তাদের কর্ম সংস্হানের ব্যবস্থা করতে হবে। যে সকল কর্মীরা এতো নিয়ম অনিয়ম করে মন্ত্রী, এম পি বানিয়েছে তাদের খোরাক মেটাতে হবে ।তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করতে হবে। নুতন পরিকল্পনা অনুযায়ি কর্মসংস্হান বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে অনেকাংশেই এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে। সরকার প্রধানের উপর জনগনের আস্তা আছে; তিনি ইতিমধ্যেই অনেক দু:সাধ্য সাধন করেছেন। অনেক অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এখন এই কাজটি হবে যুদ্ধাপোরাধীদের বিচারের চেয়েও ভীষন চ্যালেন্জিং। এত দুর্নীতি !এ-তো দুর্নীতি !! এ- তো !!! সমাজের প্রত্যেক রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিতে ইটের উপর ইট রেখে দেওয়াল ও বহুতল ইমারত তৈরী হয়ে গিয়েছে। এগুলি ভাংতে অনেক শক্তির প্রয়োজন। এতো শক্তি অর্জন করা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, আপনার হাতে বুলড্রেজার আছে, আপনার আছে স্টীম রুলার, আপনি পারবেন । আপনার উপর আছে সরল প্রান মানুষের দোয়া, আছে সমর্থন ও প্রানভরা শুভকামনা।
ইঁদুর কর্তৃক বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার মত অসাধ্য ব্যপার এটি নয়। জনগনের সহযোগিতার প্রয়োজন। শুধু সমর্থন নয় সজাগ হতে হবে সকল কে কাজ করতে হবে সবাইকে নিয়ে। এতোদিন যেটা পারেন নাই, আজ সময় এসেছে।সকলকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে ।দুর্নীতিবাজরা তারা সহজেই তাদের অভ্যাস ত্যাগ নাও করতে পারে। তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু আপনি / আমি যেনো তাদের কে কোনভাবেই সহযোগিতা বা তাদের ফাঁদে না পড়ি। সোনার বাংলায় যেনো সোনার সরকার হয় তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন হবে। তদুপরি আমরা দেশের মানুষ ১০০% ধর্ম বিশ্বাস করি; মনের বিশ্বাসের সাথে ১০০% ধার্মিক হতে পারলেই হয়ে গেলো। কোনও ধর্মেও দুর্নীতি সমর্থন করে না। আমাদের ধার্মিক চেতনার উন্নতি হলেই সবকিছু সঠিক! সমাজ যদি প্রকৃত ধার্মিক হয় অসাম্প্রদায়িকতা, পারস্পরিক সৌহর্দতা, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতাও বৃদ্ধি পাবে। হালাল খাবো হালাল পথে চলবো জীবনকে ও নুতন প্রজন্মকেও তেমনিভাবে গড়ে তুলবো। কি আনন্দ, কত সুন্দরই না হবে!