স্মার্টফোন শিশুদের বিনোদনের মাধ্যম হতে পারে না
আজকাল অনেক শিশুর হাতেই স্মার্টফোন দেখা যায়। আগে মাঠে খেলতে যাওয়ার বদলে শিশুরা ঘরবন্দি হয়ে টেলিভিশনে কার্টুন দেখায় বুঁদ হয়ে থাকত।
বর্তমানে এর বদলে তারা স্মার্টফোনে বিভিন্ন গেম খেলা, ইউটিউবে গান শোনা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। অনেক মা শিশুকে খাবার খাওয়ানোর সময় হাতে স্মার্টফোন দিয়ে অনবরত নাচ-গানে ব্যস্ত রাখে শিশুকে।
আধুনিকা মায়েদের ভাষ্য- স্মার্টফোনে গান শুনতে না দিলে বা ভিডিও দেখতে না দিলে বাচ্চারা খেতে চায় না। আবার শর্তসাপেক্ষে মায়েরা শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেন; যেমন- এ কাজটা করতে পারলে মোবাইলে গেম খেলতে দেব, এই হোমওয়ার্কটা শেষ হলে মোবাইলে গান শুনতে দেব ইত্যাদি। মায়েদের এ খামখেয়ালির কারণে শিশুদের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সে সম্পর্কে তারা উদাসীন।
ছোটবেলা থেকেই স্মার্টফোনের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাইমারি লেভেল থেকেই মায়ের ফোন নিয়ে স্কুলের বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে কারণে অকারণে কথা বলছে।
হায়ার সেকেন্ডারি লেভেলে তো তা ফেসবুক কিংবা মেসেঞ্জার পর্যন্ত যায়। অবশ্য মায়েদের ফেসবুক-মেসেঞ্জার আইডি থেকেই তারা তাদের তথাকথিত যোগাযোগ চালিয়ে যায়।
এটা নাকি তাদের সময় কাটানোর রসদ। এর ফলে কিশোর বয়সেই ছেলেমেয়েরা এমন অনেক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা তাদের বিভিন্ন অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অল্প বয়সে প্রেম, ব্রেক-আপসহ নানা ধরনের অশ্লীলতায়ও জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-কিশোরীরা।
অভিভাবকরা যখন সন্তানদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে যান, ততদিনে খুব দেরি হয়ে যায়। তখনই সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তে থাকে, যা কখনই কাম্য নয়।
সন্তানদের স্মার্ট সাজাতে গিয়ে, যুগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সুযোগ দিতে গিয়ে অভিভাবকরা যে কী পরিমাণ ভুল পথ দেখাচ্ছেন সন্তানদের, এ সম্পর্কে তারা নিজেরাও হয়তো অবগত নন।
মনে রাখতে হবে, শুধু স্মার্টফোন-ল্যাপটপ থাকলেই আধুনিক হওয়া যায় না। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ বুঝেশুনে নিতে পারা আর সময়ের সঙ্গে নিজের যোগ্যতা বৃদ্ধি করাটাই হচ্ছে আধুনিকতার সংজ্ঞা। প্রত্যেক অভিভাবকের স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত।
শিশুকে ছোটবেলা থেকে যে শিক্ষা দেয়া হয়, যে আচরণে অভ্যস্ত করা হয়; তাই তারা গ্রহণ করে। পরিবারই একজন মানুষের জীবনের প্রথম পাঠশালা। তাই সুশিক্ষাটা যেন পরিবার থেকে নিশ্চিত হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়