শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বোমা হামলায় নিহত ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ভূমিকম্পে ভানুয়াতুতে নিহত বেড়ে ১৪ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 30 September, 2019 01:28

বাংলাদেশ চায় শান্তিপূর্ণ সমাধান

বাংলাদেশ চায় শান্তিপূর্ণ সমাধান
জাফর ওয়াজেদ :

শান্তিময় নিরাপদ বিশ্বের স্বপ্ন সবসময় দেখে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিরন্তর সংগ্রামও চালিয়ে আসছেন অশান্তি, হানাহানি, সংঘাত, সংঘর্ষের বিরুদ্ধে। কেবল নিজ দেশ নয়, পৃথিবীর কোথাও একটি মানুষও যেন রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার না হয়, কোন জাতি যেন রাষ্ট্রীয় গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয়, সে জন্য তার নিরলস প্রয়াস। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি দেশকে নিয়ে গেছেন জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত অবস্থানের দিকে। পার্বত্যাঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাত, সশস্ত্র আক্রমণ সবকিছুকে ছাপিয়ে তিনি শান্তির বারতা দিয়ে শান্তি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে অশান্তির নির্মূল ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলাদেশ এবং তার অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যিনি নিবেদিত, তিনি সহজে ভেঙ্গে পড়বেন না, সেটাই স্বাভাবিক। দৃঢ়তার সঙ্গে সব প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে আসছেন তিনি। স্বদেশে বিদেশে তাই তার অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। বিশ্ব মানবতার স্বার্থকে সব সময় প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন বলেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে কোন বাধা প্রদান করেননি বরং সীমান্ত উন্মুক্ত করে রেখেছেন।

প্রতিবেশী দেশের বর্বরতার নিদর্শন এই রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী। যাদের নির্মূল করতে সে দেশের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাশবিক ও নারকীয় আচরণ করে আসছে, চালিয়েছে নির্মম হত্যা এবং গণহত্যা; যার দালিলিক প্রমাণাদি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই বর্বরতার মাসুল দিতে হচ্ছে জনসংখ্যার ভারে নু্যূব্জ বাংলাদেশকে। লাখ লাখ অসহায় মানুষ নদীর স্রোত পেরিয়ে যখন বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে অনুপ্রবেশ করেছে, তখন আর্তমানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। নিজ দেশে পরবাসী হয়ে থাকা এই দরিদ্র, শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, ধর্ষিত, গুলিবিদ্ধ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সান্ত¡নার বাণী শুধু নয়, শান্তি ও স্বস্তির বাণীও উচ্চারণ করে বলেছেন, তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে দিতে হবে। আর এই সবকিছু শুধু কথার কথা নয়। কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় তাঁর জগত। বিশ্বমানবের কাছেও তিনি আর্তমানবের হাহাকার আর বেঁচে থাকার আকুতিকে তুলে ধরেছেন। শুধু তুলে ধরা নয়, সমাধানের পথও দেখিয়েছেন। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথ ও পন্থা যাতে অবলম্বন করা হয় সে জন্য তিনি রূপরেখাও তুলে ধরেছেন বিশ্ব দরবারে। প্রতিবেশীর প্রতি বেশি বেশি করার তাগিদ নয়, মৃত্যুমুখী মানুষের প্রাণ রক্ষায় তিনি সব ধরনের প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্কট নিরসনেও চেয়েছেন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। জাতিসংঘ যাদের সম্পর্কে বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত গোষ্ঠী, সেই গোষ্ঠী মানবরা দুঃসময়কে ধারণ করে টিকেছিল নিজ বাসভূমে। জন্মভূমে নিভু নিভু সলতের মতো। সেই সলতেও নিভে গেছে। শেষ আশ্রয় হিসেবে তারা অনুপ্রবেশ করেছে বাংলাদেশে লাখ লাখে। এর আগে এসেছে হাজার হাজার। গত চার দশকজুড়ে মৃত্যু আর দেশত্যাগ তাদের কপাল লিখন যেন। কে দেবে তাদের বাঁচার দিশা। কে দেবে জন্মভূমিতে থাকতে পারার নিশ্চয়তা, সর্বহারা হয়ে ভেসে যাওয়া থেকে কে করবে তাদের উদ্ধার, এ সবকিছুই ছিল না জানা তাদের। কিন্তু তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, পিতার মতোই বীরতেজে, মানবিক বোধে, শান্তি, স্বস্তির আবাহন নিয়ে। বুকে টেনে নিলেন দুঃসহ বেদনার ভারে জর্জরিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের। বলেছেন, তাদের পাশে আছি, পাশেই থাকব। ষোলো কোটি মানুষের দেশের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসের বরাভয় কাঁধে বলেছেনও, প্রয়োজনে একবেলা খাব, আরেক বেলা ভাগ করে খাবো। দশ লাখ রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণের দায়ভার বহনের কথা শেখ হাসিনা বলেই অমন অবলীলায় ঘোষণা করতে পেরেছেন। এই সঙ্কট নিরসন বাস্তবে বা অলৌকিকভাবে সম্ভব নয় বাংলাদেশের পক্ষে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া পুরো বিষয়টিই হয়ে পড়ছে দুরূহ।

কবে শেষ হবে মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান নামক বর্বরতার? জানা নেই বুঝি কারও। শান্তিকন্যা সুচির কাছে যা রাজনীতির খেলা, রোহিঙ্গাদের কাছে তা-ই আজ মরণদশা। দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়তে হয়েছে তাদের সেই ১৯৭৮ সালের পর থেকে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার পর পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে আশ্রয় নিয়েছে তারা। রাষ্ট্রহীন, দেশবিহীন জাতিতে পরিণত রোহিঙ্গারা যেমন জানে না তেমনি আমরাও বুঝতে পারি না, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হবে কি! শীঘ্রই তারা পারবে কি ফিরে যেতে নিজ বাসভূমে। মিয়ানমার কি ফেরত দেবে তাদের নাগরিকত্ব। কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশার আলো দেখালেও সে আলো যেন নিভু নিভু তাদের চোখে। কমিশনের প্রস্তাবে রাখাইন পরিস্থিতির উত্তরণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের জোরালো আহ্বান জানানো হলেও সুচি এ নিয়ে ‘স্পিকটি নট’। বৈধ কাগজপত্রহীন রোহিঙ্গাদের ‘নাগরিকত্ব’ দেয়ার প্রশ্নে নেতিবাচক অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য খোলাসা করে বলেছেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের দেশে ফিরতে গেলে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে প্রমাণ দিতে হবে নাগরিকত্বের। এ রকম জঘন্য বাক্যবাণ এই হামদার্দদের জন্য স্বাভাবিক বৈকি। ১৯৮২ সালের বিতর্কিত বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। এতে দেশটিতে বসবাসকারীদের ‘সিটিজেন’, ‘এ্যাসোসিয়েট’, ‘জেস ন্যাচারালাইজড’ এই তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এমনকি দেশটির সামরিক জান্তা শাসকরা রোহিঙ্গাদের আদিবাসী নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পর দেশটিতে আগতদের এ্যাসোসিয়েট আর ১৯৮২ সালে নতুন আবেদনকারীদের জেস ন্যাচারালাইজড বলে আখ্যা দেয়া হয়। ওই আইনের চার নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেয়া হয়, কোন জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রে নাগরিক কিনা, তা আইন-আদালত নয়, নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এই আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়। কোফি আনান কমিশনের সুপারিশে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চত করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘যদি স্থানীয় জনগণে বৈধ অভিযোগগুলো উপেক্ষা করা হয়, তবে তারা জঙ্গী সংগঠনগুলোতে যোগ দেয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে।’ রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত না করা হলে এবং এ সম্প্রদায়টি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক থেকে গেলে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য জঙ্গীবাদের উর্বর ঘাঁটিতে পরিণত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কমিশন। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ‘হোয়াইট কার্ড’ দেয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করা হয়। পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা এই কার্ডধারী ছিল। সে সময় নাগরিকত্ব না থাকা ব্যক্তিদের ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ করার প্রস্তাব দেয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দফতর। ওই সময়ে মাত্র ৩৫ হাজার ৯শ’ ৪২ জন আবেদন করেছিল। আর গোটা রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্বহীন দশ লাখ মানুষের মধ্যে ওই কার্ড দেয়া হয় সাত হাজার ৫শ’ ৪৮ জনকে। এদের সবাই যদি রোহিঙ্গাও হয়, তাহলে এই সাড়ে সাত হাজার মানুষের বাইরে আর কোন রোহিঙ্গা বৈধ কোন মানুষ নেই। কোফি আনানের সুপারিশে বলা হয়, ‘যাদের নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা হয়নি তাদের মর্যাদা কী হবে তাও সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে। অন্য সব দেশের মতো মিয়ানমারের যারা নাগরিকত্ব না পেয়েও বসবাস করছে, তাদের একটা মর্যাদা থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যারা মিয়ানমারে বাস করছে এবং কাজ করছে, তাদের অধিকারও সমুন্নত রাখা দরকার। আর যাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়ে গেছে, তাদের জন্য নাগরিকত্বের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’ অথচ সুচি বলছেন, আইন অনুযায়ী সবাইকে সুরক্ষা দিতে বদ্ধপরিকর তার দেশ। আর দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উথং তুন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনও বলেছেন, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া নাগরিকরা কত বছর মিয়ানমারের ছিল সে প্রমাণ তাদের দিতে হবে। সে প্রমাণ যদি সত্যি হয়, তবে তারা ফিরে আসতে পারে। কিন্তু তারা যদি মিয়ানমারের নাগরিক না হয়, তবে তা সম্ভব হবে না। দেশটির শাসকদের এই অবস্থান স্পষ্ট করে এরা রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে ফিরতে দেবে না। তা হলে এরা যাবে কোথায়?

আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান রোহিঙ্গা সঙ্কট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিশ্ব বিশ্ববিবেকের কাছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে সুনির্দিষ্ট ৪টি প্রস্তাব তুলে ধরেন, নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯। 

প্রস্তাবগুলোগুলো হলো- ১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্তীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে, ২. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে, ৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে, ৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

অত্যন্ত যৌক্তিক এই প্রস্তাবসমূহ জাতিসংঘের দরবারে তুলে ধরার পর বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে আশার আলো হিসেবে প্রজ্বলিত হবে বলে আশা করা যায়। রোহিঙ্গা সঙ্কট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা জনস্রোত যখন নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে তার এক মাসের মাথায় এই জাতিসংঘের বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে সাহসের সঙ্গে কথা বলেন। সঙ্কট সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমার সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণে গত বছর জাতিসংঘ অধিবেশনেও বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে।

শেখ হাসিনা অবিলম্বে, চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন নিঃশর্তে বন্ধ করার প্রস্তাব আগেই দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা, সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা, বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ ঘর বাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা, কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। শেখ হাসিনা সোচ্চার কণ্ঠে বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। মানব ধ্বংস চাই না, অর্থনৈতিক উন্নতি ও মানবকল্যাণ চাই। মানবিকবোধে আপ্লুত শেখ হাসিনা মূলত বর্তমান সঙ্কট থেকে মুক্তির বাস্তবসম্মত প্রস্তাব রেখেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিকল্প নেই। বিশ্বজনমত গঠন করার জন্য তিনি সচেষ্ট অবস্থানে রয়েছেন।

শেখ হাসিনা অবশ্যই চাইছেন, দ্রুত সমস্যা সমাধানের। এই শরণার্থীর ভার বহন করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী। দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় এমন বিপুলসংখ্যক শরণার্থী বছরের পর বছর পোষা দুরূহ। পর্যটননগরী কক্সবাজারের অবস্থা খুবই নাজুক। এর প্রভাবে পর্যটন খাত বিরূপ অবস্থানে। অপরদিকে, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আগমনের ফলে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের ওপর মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য এখানে উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন, ‘পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যদিও এই ঝুঁকির জন্য আমরা দায়ী নই। আমরা সীমিত সম্পদ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি প্রশমন ও অভিযোজন করে যাচ্ছি।’ এ ঝুঁকির মধ্যে যুক্ত হয়েছে রোহিঙ্গাদের চাপ। লাখ লাখ রোহিঙ্গার স্যানিটেশন ব্যবস্থা করা হলেও তাদের দ্বারা নানাভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পাহাড় ও বন কেটে তাদের থাকার ব্যবস্থা করায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

এসব করুণ অবস্থা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা আর্তমানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। জাতিসংঘ যদি সক্রিয় না হয়, তবে বিপদ ঘনাবেই। কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ও বিশ্ববাসীকে সোচ্চার করার কাজ জাতিসংঘেরও। একই সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের সমাধানের দায়িত্বও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার এই প্রতিষ্ঠানটির।

বিশ্বজুড়েই আজ শরণার্থী সঙ্কট। সেই সঙ্কট নিরসনে শক্তিধর দেশগুলো যদি এগিয়ে না আসে, তবে পরিস্থিতি ক্রম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠবেই। শেখ হাসিনা বিশ্বের সব অঞ্চলের সব শরণার্থীর নিজ দেশে স্বাভাবিক নিশ্চয়তা পাবে এমন স্বপ্ন শুধু দেখা নয়। তা বাস্তবায়নে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাবেনই। সামনে যতই বাধা আসুক, সব ডিঙ্গিয়ে তিনি পাড়ি দেবেন শান্তি ও স্বস্তির পারাপারে।

 

 

লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)

উপরে