শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বোমা হামলায় নিহত ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ভূমিকম্পে ভানুয়াতুতে নিহত বেড়ে ১৪ নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 27 November, 2019 02:18

অভিমত ॥ স্বপ্ন পূরণ

অভিমত ॥ স্বপ্ন পূরণ
আবু সালেহ মোহাম্মদ মুসা :

দরিদ্রতা কাটিয়ে ওপরে উঠতে রহিমা বেগমের স্বপ্নের সীমা নেই। বিনামূল্যে বই পাবে, সন্তান শিক্ষিত হবে, দুপুরের খাবার পাবে, মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা আসবে তার মতো দরিদ্রদের স্বপ্ন পূরণ হবে। আরও অনেকের মতো এক সময় বিষয়টি রহিমা বেগমের কাছে স্বপ্ন মনে হলেও আজ তা বাস্তব। সময়ের ব্যবধানে লক্ষ্যস্থির করে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত ফল এটি। এখন আর বিষয়টি কঠিন কিছু নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত। গরিব, খেটে খাওয়া, অসচ্ছল মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটেছে। ঘরের দুয়ারে স্কুল, দুপুরে একটু খাওয়ার ব্যবস্থা, এক কোটি ত্রিশ লাখ মায়ের হাতের মোবাইলে সময়মতো টাকা এসে পৌঁছানো, সবই স্বপ্ন পূরণেরই অংশ।

বাড়ির কাছে স্কুল নেই, তিন-চার মাইল কাদা ঠেলে প্রতিদিন কমপক্ষে দু’ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পরিশ্রম করে স্কুলে যাতায়াত করার সেই দিন এখন শেষ। দেশের সর্বত্রই আজ বলতে গেলে ঘরের দুয়ারে স্কুল গড়ে উঠেছে। শিক্ষকরা সময়মতো সরকারী বেতন পাচ্ছেন, স্কুলে শিক্ষকের স্বল্পতা নেই, বিনামূল্যে বই, দুপুরে স্কুলেই খাবার ব্যবস্থা, আবার মাসে মাসে মায়ের হাতের মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা, সবই জনগণের কল্যাণে সরকারী সেবা।

এখন আর কেউ লেখাপড়ার বাইরে নেই। এক স্কুলে একজন শিক্ষক কখন কোন্ ক্লাসে যাবেন, এ চিন্তা এখন আর করতে হয় না। শিক্ষকদের নিয়ে কোন ভোগান্তি নেই। গরিবের সংসারে খরচ বাঁচিয়ে বই-খাতা কেনা, স্কুলের বেতন দেয়া, টিফিন যোগাড় করা, এসব মাতা-পিতা এখন ভাবেন না। এ সব খরচই সরকার বহন করছে এখন। এ ছাড়াও সরকার উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছে। এ যেন দেশে এসেছে সুখের দিন, ঘরে ঘরে শিক্ষিত সন্তান আলো করে আছে চারপাশ।

স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার সাধ এখন সাধারণ জনগণের কাছে ধরা দিতে শুরু করেছে। তাই মনে হয় লাখ লাখ শহীদের জীবন উৎসর্গ বৃথা যায়নি। আমাদের স্বাধীনতার সুফল দিতে, আমাদের জীবনকে আলোকিত করতে এ প্রাপ্তি। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছেন এবং শিক্ষার সত্যিকারের মান উন্নয়নের প্রচেষ্টা চলছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে। যতদিন যাবে আমাদের দৈনন্দিন কাজের প্রতিটি বিষয় ডিজিটাল কর্মপদ্ধতির আওতায় আসবে ও জনগণ এর সুফল হাতের নাগালে পাবে। পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি, তাই সময় দিয়ে পরিশ্রম করলে বিফলে যাবে না। আমাদের স্বপ্ন সফল হবেই। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সকলের যদি জবাবদিহি থাকে, তবে বিশাল জনসংখ্যার এই দেশ উন্নয়নের মডেল হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবেই হবে।

আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে দেশের আপামর জনসাধারণের সার্বিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী। শিক্ষা জাতির মেরুদ-, আর এই শিক্ষাকে সকল শ্রেণীর জনগণের কাছে সকল দিক থেকে সহজলভ্য করার জন্য সরকারের সকল উদ্যোগ আজ প্রশংসিত। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, বিজ্ঞানের এ যুগে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপকে মাথায় নিয়ে জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে আমাদের একাত্মতা প্রকাশ করে দেশকে এগিয়ে নেয়া কর্তব্য।

‘কৃষকের ছেলে কৃষক হবে, বড়োজোর লাঙ্গল ছেড়ে ট্রাক্টর চালাবে’-এ রকম চিন্তা এখন আর কেউ করে না। শিক্ষা আজ সবার জন্য উন্মুক্ত, মেধার পরিচয় দিয়ে যে যার উপযোগী অবস্থানে যাতে যেতে পারে, এ জন্য অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ সরকার নিশ্চিত করেছে। আর্থিক দুরবস্থার কথা চিন্তা করে স্কুলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, বিনামূল্যে বই-খাতা সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে, মায়ের হাতে উপবৃত্তি হিসেবে কিছু টাকা ও দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারী ভাতা প্রতিমাসে দশ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই এই বৃদ্ধ বয়সে এই ভাতা প্রাপ্তির ওপর সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন, সন্তানের পড়াশোনাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করছেন। এমনিভাবে সরকারের গৃহীত অনেকগুলো উদ্যোগ সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত।

সরকার ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্যে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ হতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত সকল স্তরের ছাত্রছাত্রীর জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছেন। পর পর পাঁচ বছর শিক্ষা শুরুর প্রথম ক্লাসেই সারাদেশে সব ছাত্রছাত্রীর হাতে বই পৌঁছে দেয়া সরকারের সফলতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তা ছাড়া সরকার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধির হার, ঝরে পড়া হ্রাস এবং সারা বছর পুষ্টি গুণসম্পন্ন খাবার দিতে জাতীয় স্কুল মিল নীতি-২০১৯ নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

এ ছাড়া সরকার ধনী, গরিব, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বিদ্যালয় শতভাগ উপবৃত্তি দেয়ার ফলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে। সরকার প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর এক সন্তানের জন্য ৫০ টাকা, দুই সন্তানের জন্য ১০০ টাকা, তিন সন্তানের জন্য ১২৫ টাকা এবং চার সন্তানের জন্য ১৫০ টাকা হারে উপবৃত্তি প্রদান করছে। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।

গ্রামের ঘরে ঘরে এখন একজন না একজন শিক্ষিত পুরুষ বা মহিলা চাকরি করছে। বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখাশোনার পাশাপাশি তারা জমি চাষাবাদ, মাছ চাষ, গরু ছাগল হাস-মুরগি পালন থেকে শুরু করে সাংসারিক যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে চলেছেন। সব মিলিয়ে আগের সেই ‘না খাওয়া’ ‘না দাওয়া’ কষ্টের দিনগুলোর বদলে এখন ভাল আছেন সবাই। এখন সবাই সন্তান সন্ততির লেখাপড়াসহ আরো উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখেন। সরকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আজ তাদের প্রতিষ্ঠিত করছে। একদিন সরকার তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। আর আজ জনগণ নিজেরাই সেই দেখানো পথে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়ে।

 

লেখক : সাংবাদিক

উপরে