শিরোনাম
সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপে তৎপর ভারতীয় আমেরিকানরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে রাশিয়ার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ লুট করে নিল মুখোশ পরিহিতরা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 30 November, 2019 01:49

এসএমই সেক্টর পুনর্গঠন কতটা ফলপ্রসূ হবে

এসএমই সেক্টর পুনর্গঠন কতটা ফলপ্রসূ হবে
এম এ খালেক :

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্প খাতের কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতিবিদরাও এ ব্যাপারে একমত- কৃষি নয় শিল্পের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই একটি দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

কিন্তু শিল্পের স্বরূপ কেমন হবে বা কী ধরনের শিল্প একটি দেশের জন্য উপযোগী, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে অনেকদিন ধরেই। যদিও আমরা ইতিমধ্যেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি; কিন্তু বিতর্ক চলছেই। অনেকেই মনে করেন, একমাত্র বৃহৎ শিল্পের ওপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই একটি দেশ কাক্সিক্ষত শিল্পায়নের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

শিল্পায়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি দেশকে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া। সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের মতো পণ্য ও সেবা উৎপাদন করা এবং উৎপাদিত উদ্বৃত্ত পণ্য ও সেবা রফতানি করে দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা।

শিল্পায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা গেলে খুব সহজেই দারিদ্র্যবিমোচন করা সম্ভব। কৃষি উৎপাদন যেহেতু গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পায়, তাই কৃষি খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা কোনোভাবেই একটি দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না।

পৃথিবীতে একটি দেশেরও উদাহরণ দেয়া যাবে না, যারা শিল্প খাতের ওপর গুরুত্বারোপ না করে শুধু কৃষির ওপর নির্ভর করে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। উন্নয়নের জন্য শিল্পায়ন প্রয়োজন; কিন্তু সেই শিল্পায়নের স্বরূপ বা কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।

এ বিতর্ক অনেকটাই ‘ডিম আগে নাকি মুরগি আগে’ বিতর্কের মতো। তবে এ বিতর্ক অবসানের সম্ভবত সময় এসেছে। একদল অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, বৃহৎ শিল্প নাকি এসএমই শিল্প- এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। কারণ এরা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং সহায়ক শক্তি।

একটি দেশের দ্রুত এবং কাক্সিক্ষত মাত্রায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাইলে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্পের মাঝে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বিস্ময় জাগানিয়া শক্তি চীন-জাপান এ ক্ষেত্রে চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। চীন এবং জাপান তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে শিল্পায়নকে গ্রহণ করেছে।

তারা বৃহৎ শিল্পের ওপর যেমন জোর দিয়েছে, তেমনি এসএমই শিল্পের ক্ষেত্রেও কোনো অবহেলা করেনি। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা বৃহৎ শিল্প এবং এসএমই শিল্পের মাঝে চমৎকার সমন্বয় ঘটিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত গতিশীল ও ইতিবাচক ধারায় প্রবহমান রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এ ধারা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এসএমই খাতের সম্ভাবনা কতটা, তা জানার জন্য সম্প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলামের মুখোমুখি হয়েছিলাম।

তিনি বলেন, এসএমই সেক্টরের গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বর্তমানে আমাদের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে এসএমই খাতের অবদান হচ্ছে ২৫ শতাংশের মতো। বাংলাদেশের শিল্প খাতে এসএমই সেক্টরের অবদান প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ।

সে বিবেচনায় শিল্প মন্ত্রণালয় বা শিল্প খাতের যে অর্জন, তার সিংহভাগই আসছে এসএমই খাত থেকে। এসএমই সেক্টরের গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকারের উন্নয়ন কৌশলের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে এসএমই খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তারই আলোকে প্রায় এক মাস আগে এসএমই পলিসি-২০১৯ নামে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। এ নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এসএমই সেক্টরের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সভায় এ নতুন এসএমই নীতিমালা অনুমোদন করেছেন। অনুমোদিত নতুন এসএমই নীতিমালায় এ খাতের উন্নয়নের ১১টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রাগুলো বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে।

এসএমই নীতিমালার এসব গোল বা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শুধু এসএমই ফাউন্ডেশন বা শিল্প মন্ত্রণালয় নয়, সংশ্লিষ্ট আরও অনেক মন্ত্রণালয় ও দফতর অংশীজন হিসেবে কাজ করবে। গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য দুটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর একটি হচ্ছে কাউন্সিল কমিটি, যার প্রধান হবেন শিল্পমন্ত্রী এবং অন্যটি টাস্কফোর্স কমিটি, যার প্রধান হবেন শিল্প সচিব। আমাদের যেসব রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে, যেমন- ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, ২০২৪ সালের মধ্যে কার্যকর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া- এগুলো অর্জনের জন্য এসএমই খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আগামীতে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হবে এসএমই খাত। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উপনীত হবে।

এটি করতে হলে দেশের জাতীয় অর্থনীতি বা জিডিপিতে শিল্প খাতের সার্বিক অবদান অন্তত ৪০ শতাংশ এবং এসএমই সেক্টরের অবদান ২৫ থেকে অন্তত ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। যেমন- ভারতের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৮ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় এটি প্রায় ৫৯ শতাংশ, জার্মানিতে প্রায় ৬০ শতাংশ।

আমরা ২০৪১ সালে যখন উন্নত দেশের কাতারে চলে যাব, তখন এসএমই খাতের অবদান বর্তমানের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। সরকার এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই এসএমই খাতের উন্নয়নে বিশেষ জোর দিয়েছে। এসএমই সেক্টরের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

উন্মোচন এবং বিদ্যমান সম্ভাবনার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এটা অনস্বীকার্য, আমাদের দেশে বেকার সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার মাধ্যমে বিদ্যমান বেকার সমস্যা কোনোভাবেই সমাধান করা যাবে না। আগামীতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এ বেকার সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। কারণ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। আগামীতে এসএমই খাত কর্মসৃজনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হবে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে যারা কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাবে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এসএমই খাত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- মানবসম্পদের উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুগের চাহিদা বা চ্যালেঞ্জ মেটানোর মতো উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমাদের এখন থেকেই সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে হবে।

আমরা যদি জনসম্পদকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারি তাহলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জন্য বড় কোনো ক্ষতির কারণ হতে পারবে না এবং এটি করতে হবে এসএমই সেক্টরের বিকাশের মাধ্যমেই।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই সেক্টরের অবদান অনুধাবন করেই সরকার এ সেক্টরের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রথমবারের মতো ‘স্টার্ট আপ বিজনেস’ নামে একটি নতুন খাত সৃষ্টি করে সেখানে ১০০ কোটি টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সারা দেশব্যাপী সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রাথমিক পুঁজির জোগান দেয়াই হবে এ ফান্ডের মূল উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) দেশব্যাপী ২০ হাজার সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ জানান, পিকেএসএফের উদ্যোগে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উপযুক্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। উপযুক্ত ঋণের অর্থ হচ্ছে যার যেটুকু অর্থের প্রয়োজন তাকে সেটুকু ঋণ বা অর্থ দেয়া হয়।

ঋণদানের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং বাজারজাতকরণ কৌশল সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সরকারি পর্যায়েও এসএমই শিল্প বিকাশের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সভায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এটি এ খাতের বিকাশে চমৎকার অবদান রাখবে। নারী উদ্যোক্তরা এতে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। সামাজিক ও পারিবারিক কারণে নারী উদ্যোক্তারা চাইলেই ব্যাংক ঋণ গ্রহণকালে চাহিদামতো জামানত দিতে পারেন না। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা ঋণ পান না। এখন সেই সমস্যা দূরীকরণ হবে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নারী উদ্যোক্তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং গৃহীত ঋণের কিস্তি ফেরতদানের ক্ষেত্রে পুরুষ উদ্যোক্তাদের চেয়ে অগ্রগামী। ইতিপূর্বে কুটির শিল্প ও মাইক্রো শিল্পকে এসএমই সেক্টরের আওতাভুক্ত বলে গণ্য করা হতো না। এ সমস্যাও সম্প্রতি সমাধান হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এসএমইএসপিডি সার্কুলার নং-২-এর মাধ্যমে এসএমই (স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) সেক্টরের সংজ্ঞায় পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে কুটির শিল্প ও মাইক্রো শিল্পও এসএমই খাতের আওতাভুক্ত করে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা সিএমএসএমই খাত। জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬’র আলোকে বর্ণিত শিল্পখাতগুলোর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্ভাব্য ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ সার্কুলারের ফলে এখন থেকে কুটির শিল্প এবং মাইক্রো শিল্পগুলোও এসএমই খাতের সুবিধা পাবে। এটি অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ। এর ফলে কুটির শিল্পোদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র শিল্প মালিকদের দীর্ঘদিনের একটি চাওয়া পূরণ হল; কিন্তু এ সার্কুলারের একটি ধারা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সার্কুলারের ৪.৩(খ)নং উপধারায় বলা হয়েছে, ‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ’র) অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) সঙ্গে লিঙ্কেজের মাধ্যমে কুটির ও মাইক্রো উদ্যোগে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

তবে এ ক্ষেত্রে ঋণের সব দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরই বর্তাবে এবং উক্ত ঋণ গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণের পরই তা কেবল কুটির ও মাইক্রো উদ্যোগ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে।’ একই সার্কুলারের ৬.২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘৪.৩(খ) ক্রমিকে বর্ণিত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের সুদ হার গ্রাহক পর্যায়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ’র) কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।’

শঙ্কা দেখা দিয়েছে এখানেই। এমআরএ নির্ধারিত বর্তমান সুদ হার হচ্ছে ২৪ শতাংশ। আগে এটি ছিল ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো যদি সরাসরি উদ্যোক্তাদের কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়ন করে তাহলে সেই ঋণের সুদ হার হবে ৯ শতাংশ; কিন্তু একই ঋণ যখন বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) সঙ্গে লিঙ্কেজে বিতরণ করা হবে, তখন তার সুদ হার হবে ২৪ শতাংশ। তাহলে টার্গেট গ্রুপের কী লাভ হল?

বিষয়টি নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গেই আলোচনা করেছি। তাদের অনেকেরই বক্তব্য হচ্ছে, বেসরকারি ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর অপারেটিং কস্ট বেশি। তারা ঋণ আদায়ের জন্য নিবিড় তত্ত্বাবধান করে তাই তাদের ঋণের সুদের হার বেশি হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।

ট্রাডিশনাল ব্যাংকগুলোর যেহেতু দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় শাখা নেই, কুটির শিল্প ও মাইক্রো শিল্পে ঋণদানের অভিজ্ঞতা কম; এসব কারণে বেসরকারি ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর সহায়তা নেয়া যেতে পারে; কিন্তু এভাবে ঋণ বিতরণ করলে তৃণমূল পর্যায়ের কুটির শিল্প মালিক এবং মাইক্রো শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বেসরকারি ঋণদানকারী সংস্থার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করার আবশ্যকতা থাকলে তাদের জন্য অন্য কোনো ঋণদানকারী কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জন্য বিশেষ ফান্ড বরাদ্দ করতে পারে। কাজেই তৃণমূল পর্যায়ের কুটির ও মাইক্রো শিল্পোদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

 

: অর্থনীতিবিষয়ক কলাম লেখক

উপরে