নতুন বছর এবং কিছু কথা, কিছু প্রত্যাশা
এন সি রয়:
দেখতে দেখতে আরও একটি বছর কালের গর্ভে বিলীন হ’য়ে গেলো। প্রত্যেকের জীবন থেকে আরও একটি বছর প্রস্থান করল। হারিয়ে গেলো কিছু স্মৃতি বিস্মৃতির জীবন্ত সম্পৃক্ত মুহূর্ত। হয়তো কিছু আনন্দময় ক্ষন, কিছু ব্যাতিক্রমী ঘটনা, কিছু সুখ, কিছু সুন্দর সময় এসেছিলো জীবনের এই পথচলার রাস্তায়। নয়তো কিছু দু:খ, কিছু কষ্ট, কিছু না পাওয়ার বেদনা, কিছু হারিয়ে যাবার বিরহ যন্ত্রনা এই ভ্রমনে সহযাত্রী হয়েছিলো।
হ্যাঁ, এটাই তো পরম ও চরম বাস্তবতা। এটাকে মেনে নিয়েই আমাদের পথচলা, আমাদের সমাজবদ্ধ সংসার জীবন । আমাদের মাঝে আনন্দের উৎফুল্লতা আছে, উত্তেজনার বহিপ্রকাশ বা বিস্ফোরণ আছে, সুখে আমরা অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ি। আমরা আবার দু:খে কাতর হই, কষ্টে কান্নায় ভেংগে পড়ি, শোকে চিৎকার করে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাই। এটাই আমাদের অনুভূতির বহিপ্রকাশ ! আমরা কখনোও প্রার্থনালয়ে যাই, সুখে দু:খে সকল কিছু পরমেশ্বরের নিকট অভিব্যক্তি প্রকাশ করি। আবার কখনোও পার্টিহলে গিয়ে বা অন্যত্র গিয়ে ভিন্ন কায়দায় আনন্দ প্রকাশ করি । আবার অনেকেই শুধু কষ্টের সময় পরম পিতার কথা স্মরন করি।
আমরা শুধু ভালোটাই চাই, যখন আমরা ভালোটা চাই তখনই মনে হয় আমরা ভুল করে বসি। কারন কোন এক কবি বলেছিলেন, “অমঙ্গলকে দুনিয়া হ’তে তাডিয়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করোনা, তা হ’লে মঙ্গল সমেত উবিয়া যাইতে পারে।” ভালো ও মন্দ পাশাপাশি অবস্থান করে; একটিকে ডাকলে সেটি যদি সাড়া না দেয়, অন্যটি চলে আসবে, হয়তো বা কোনটাই আসবে না। তবে মন্দের মধ্যে ভালো যে, কোনটিই চিরদিন স্থায়ী নয়। যেটিই আসুক না কেনো কোনটিই চিরস্থায়িত্ব নিয়ে আসে না।
এতকিছু লেখালেখির একটাই হ’ল কারণ যে, আজ ৩১শে ডিসেম্বর, ইংরেজী বছরের শেষ দিন । আমরা গমন্মুক বছরকে বিদায় যানাবো, নূতন আগন্তুক বছরকে স্বাগত জানাবো। মাহেন্দ্র ক্ষন হিসাবে আমরা রাত ১১:৫৯:৫৯সে: ও পরিবর্তনের সন্ধিক্ষন মুহূর্ত মধ্যরাত ১২:০০টা এবং নূতন বছরের প্রবেশ ক্ষন ১২:০০:০১ সে: এই যে সর্বমোট ৩ সেকেন্ড সময় এটাই হ’ল আমাদের অনেকের কাছে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ! সেই জন্যই সারা দুনিয়াব্যাপী আমাদের একশ্রেণীর কাছে কত কত কিছু। আমরা এইসময়টা অমুক যায়গায় থাকবো, অমুক পোশাক পরবো, অমুক খাবার খাবো, অমুকের সাথে থাকবো, অমুক কিছু করবো ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সকলের মধ্যে অনেকের অনেক আত্মতৃপ্তি আছে । আসলে কি আছে, আপনি একটু চিন্তা করলে হয়তো উপসংহারে পৌঁছে যাবেন অতি শিঘ্রই।জীবন চলার পথে এগুলি থাকবে; এগুলি নিয়েই আমরা । তাই তো দুনিয়াব্যাপী এই উন্মাদনা, উত্তেজনার ডামাডোল।
সত্তুরের দশকে তদানীন্তন সিনেমা পত্রিকা ‘চিত্রালী’ তে চলচিত্রকার দেবু ভট্টাচার্যের একটি উক্তি পড়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, “তাহারাই প্রকৃত দর্শক, যাহারা ছবি দেখে হাসে, কাঁদে কিংবা ক্ষুব্ধ হয়; তাদের জন্যই আমরা ছবি নির্মান করি।” জীবন মানেই পথ চলা; কষ্টে বা দু:খে বা বার্থতায় বা শোকে বা যন্ত্রনায় একটু কেঁদে আবার হাটতে বা চলতে্ শুরু করা । আবার বিপরীতার্থে আনন্দে, সুখে, সাফল্যে, শান্তিতে, উল্লাসের উত্তেজনায় বা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে আবার চলতে থাকা।
কোনও কোনও ধার্মিক ব্যক্তিত্ব বা বাস্তববাদীরা আবার ভিন্ন মতাদর্শিক। তাঁরা সকল অবস্হানেই সমান ভাবাপন্ন। তাঁদের কাছে অনুভূতির কোন বহিপ্রকাশ নাই।
কোনটা কত গ্রহনযোগ্য তা শুধু ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল। আমাদের পথচলায় কেহ গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দেন, আর কেহ হিসাব করে পা ফেলেন।
অনেকেই আমরা নিজেদের নিজস্বতাকে গুরুত্ব কম দেই। আমরা হুজুকে মাতাল, ভিত্তিহীন ভাবে ছুটতে থাকি। এটা করতে্ হবে, ব্যাস; কেনো করতে্ হবে, করলে এর পরিনাম কি হবে কোনই ভাবনার প্রয়োজন নেই। জীবনে এমনটিই অনেক ।