শিরোনাম
সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপে তৎপর ভারতীয় আমেরিকানরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে রাশিয়ার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ লুট করে নিল মুখোশ পরিহিতরা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 22 February, 2020 12:51

বঙ্গবন্ধু এবং রাষ্ট্রভাষা দিবস | রিয়াজুল হক

বঙ্গবন্ধু এবং রাষ্ট্রভাষা দিবস | রিয়াজুল হক

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন। ১৯৪৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান সভার বৈঠকে রাষ্ট্রভাষা নিয়েও আলোচনা হচ্ছিল। মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতী। বঙ্গবন্ধুসহ অন্যরা দেখলেন, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অত্যন্ত ঘৃনীত ষড়যন্ত্র চলছে। বঙ্গবন্ধু সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলেন। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হল। বঙ্গবন্ধু ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলুতপুর, খুলনা ও বরিশালে ছাত্রসভা করে ১১ই মার্চের তিন দিন পূর্বে ঢাকায় ফিরে এলেন।

১১ই মার্চ বাংলা ভাষার দাবির জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শত শত ছাত্রকর্মী ইডেন বিল্ডিং, জেনারেল পোষ্ট অফিস ও অন্যান্য জায়গায় বাংলা ভাষার জন্য মিছিল শুরু করল। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার জন্য সিটি এসপি জিপ নিয়ে বারবার তাড়া করেছে এবং সন্ধ্যার সময় জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেই সময় ভাষার জন্য ছাত্র শেখ মুজিবকে জেল খাটতে হয়েছে, একটি বারও কোন মানুষকে বলতে শুনি না। এটা সত্যি দুঃখজনক। জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য বন্দিদের জন্য জেলের পাশের বালিকা বিদ্যালয়ের ছোট ছোট মেয়েরা সারাদিন স্লোগান দিত,‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ ‘বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই’, ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’ ইত্যাদি ইত্যাদি। ১৫ই মার্চ বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ১৬ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারন ছাত্রসভায় সভাপতির আসন থেকে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, “যা সংগ্রাম পরিষদ গ্রহণ করেছে, আমাদেরও তা গ্রহণ করা উচিত।” ১৯ মার্চ যখন জিন্নাহ ঢাকার ঘোড় দৌড় মাঠে ঘোষনা করলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তখন তরুণ শেখ মুজিবসহ অনেক ছাত্র চিৎকার করে জানিয়ে দিয়েছিল, ‘মানি না’। এরপর আমৃত্যু জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা আর বলেন নি। স্যালুট জানাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে, যার জন্মই হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের মুখের ভাষা ফিরিয়ে দেবার জন্য।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারী বিকালে পল্টন ময়দানে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন জানাল উর্দুই হবে এক মাত্র রাষ্ট্রভাষা। সেই সময় বঙ্গবন্ধু কারাবন্দি হিসেবে হাসপাতালে ছিলেন (ইতোমধ্যে ২৬ মাস কারাবরণ করে চলেছেন)। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাত একটার পরে তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন খালেক নেওয়াজ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ আরও অনেকে। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের হুকুম দিয়েছিলেন এবং পরের রাতে তাদের আবার আসতে বললেন। সেখানেই ঠিক হয়েছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে। আজ আমরা একটি বারও বলিনা ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবসকে (কাহাদের বৈঠকে) নির্ধারণ করেছিলেন? বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

রাষ্ট্রভাষা দিবস এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলা ভাষা কিভাবে রাষ্ট্রভাষা হলো এবং সেখানে তরুণ মুজিবের অগ্রণী ভূমিকা সম্পর্কে না জানা আমাদের প্রকৃত জ্ঞানের অভাব নির্দেশ করে। আমরা গবেষণা বিমুখ জাতি। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আমরা গবেষণা করি না। অনেকেই না জেনে মন্তব্য করি। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন। 

 

লেখক:উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক ।

উপরে