আমার এসএসসি'র রেজাল্ট আব্বার পরিশ্রমের ফসল
রিয়াজুল হক:
আমার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। সেদিন সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। একটু টেনশনও হচ্ছিল। রেজাল্ট মন মত না হলে আব্বা মাইর দিয়েও বসতে পারে। টেনশন কমানোর জন্য সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে চার বন্ধু ক্যারাম খেলা শুরু করলাম। বিকালে রেজাল্ট পাবার কথা। সকালে তো কিছু করার নাই। খেলার মধ্যে এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে রেজাল্টের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। বেলা ১২টা বাজে। হঠাৎ অনেক দূর থেকে ’রিয়াজ’, ’রিয়াজ’ নাম ধরে আব্বার ডাক শুনলাম । আব্বার ডাক শুনলে এখনো আমার কলিজা কেঁপে ওঠে। যাই হোক, খেলার ঘর থেকে বের হলাম। একটু লজ্জাও করছিল কারণ বন্ধুদের মধ্যে এসে হয়ত আব্বা শাসন শুরু করে দেবে। যদিও এসবে আমি অভ্যস্ত ছিলাম।
-তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
আব্বার পিছু পিছু বাসায় হাঁটছি। বৃষ্টি হচ্ছে। অথচ আব্বা বৃষ্টিতে ভিজেই হাঁটছে। ছাতা সাথে ছিল না। আমার মনের মধ্যে যে কত রকম চিন্তা ভর করেছে, চিন্তাই করতে পারছিলাম না।
আব্বার সাথে ঘরে ঢুকলাম। মা’কে ডাকলো। আব্বার প্রথম প্রশ্ন, তুই কি করছিস, জানিস?
-কি করছি, আব্বা?
তুই তো বোর্ডষ্ট্যান্ড করে ফেলছিস। আমার শিক্ষকতার জীবন সার্থক। সারাজীবন কত মানুষের ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছি। বলতে বলতে দেখলাম, আব্বা রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো। বুঝতে পারছিলাম, এর মধ্যেও অনেক আনন্দ, শান্তি,গর্ব ছিল।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিশ্ববিদ্যালয়েও আমি প্রথম হয়েছি। রেজাল্টের কথা আব্বাকে জানানোর পর আব্বা তখনও খুশি হয়েছিল।
কিন্তু এসএসসি'র মত কি হয়েছিল? সেটা হওয়া সম্ভব না। কারণ আমার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট তো আব্বার পরিশ্রমের ফসল। আমার চেয়ে তাঁর প্রাপ্তি সেখানে অনেক অনেক বেশি।
লেখক: উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।