শিরোনাম
সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপে তৎপর ভারতীয় আমেরিকানরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে রাশিয়ার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ লুট করে নিল মুখোশ পরিহিতরা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 6 July, 2020 20:06

প্রতিহিংসার মারপ্যাঁচে ডা. ফেরদৌস খন্দকার

প্রতিহিংসার মারপ্যাঁচে ডা. ফেরদৌস খন্দকার

॥এম আর ফারজানা॥
প্রবাসে আমরা লাল-সবুজ পতাকার বাহক। আমাদের পরিচয় আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী।
অর্থাৎ দেশকে রিপ্রেজেন্ট করি। এখানে কেউ আমাদের বংশ জিজ্ঞেস করে না বরং শিক্ষা, কাজ, সততা দিয়ে আমরা পরিচিত হই প্রবাসে । কেউ ভালো কাজ করলে সেটা যেমন নিজের ও দেশের সুনাম তেমনি মন্দ কিছু করলেও দেশের বদনাম। ডা. ফেরদৌস খন্দকার একজন চিকিৎসক। নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যখন তুঙ্গে তখন তিনি তার জায়গায় দাঁড়িয়ে সাধ্যমত কাজ করে গেছেন রোগীদের জন্য। বাংলাদেশের ইমেজ ও তৈরি করেছেন প্রবাসীদের কাছে। ডা. ফেরদৌসের ভালো কাজের প্রতিবেদন আমেরিকার মূলধারার গণমাধ্যমে ও প্রকাশিত হয়েছে তখন । একজন মেধাবী মানুষ, বিদেশে মূল্যায়ন হয়, বিদেশিরা তাকে সম্মান দেয় আর নিজ দেশের মানুষের দ্বারা অবহেলিত হয়, হেনস্তার শিকার হয় । এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
চিকিৎসক হিসাবে ডা. ফেরদৌস দেশে গিয়েছিলেন মানুষের সেবা করার জন্য, অস্ত্র, গোলা-বারুদ নিয়ে তো যাননি যে দেশকে ধ্বংস করে দিবেন, তবুও তাকে নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে । এখানেই শেষ নয়, নিউ ইয়র্কে ফেরার পর তার বিরুদ্ধে অন লাইনে যৌন নির্যাতনের পিটিশন দাখিল করছেন অনেকে তার ডাক্তারী লাইসেন্স বাতিল করার জন্য।
প্রশ্ন হচ্ছে তিনি যখন যৌন নির্যাতন করেছিলেন তখন প্রতিবাদ করেননি কেন ? পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেননি কেন ? প্রবাসে দেশের অনেক সংগঠন আছে তাদের কাছেও তো দেশের নাগরিক হিসাবে বিচার চাইতে পারতেন। কোন কমিউনিটির কাছেও তো যেতে পারতেন, নালিশ করার অনেক পন্থা খোলা ছিল। কিন্তু কিছুই করেননি।
এখন অন লাইনে পিটিশন করছেন ? আজব !! আমেরিকা এমন একটা দেশ যেখানে কোন ঘটনা ঘটলে পুলিশ পাঁচ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হয়ে যায় সেখানে আপনারা এতজন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে নীরব হয়ে রইলেন। কিভাবে সম্ভব ? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য ? সরি, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। রবং আপনাদের প্রতিহিংসার নির্লজ্জতা , মিথ্যে অপবাদের মানসিকতাই প্রকাশ পেয়েছে। আপনাদের অসৎ উদ্দেশ্যই এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আপনারা নিজেদের স্বার্থে, ব্যক্তিগত ঈর্ষায় কুৎসিতভাবে ডা. ফেরদৌসের চরিত্র হরণ করছেন । তাকে হেনস্তা করার প্রয়াস নিয়ে যে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন তা বুঝার জন্য আইন্সটাইন হবার প্রয়োজন নেই। একটু বিবেক বুদ্ধি যাদের আছে তারা এইটুকু বুঝার জন্য যথেষ্ট । আমাদের দেশে গ্রাম্য একটা কথা আছে, কাউকে নীচে নামাতে চাইলে,যখন তার শিক্ষা, অর্থ, নীতির সাথে পারে না , তখন তার চরিত্র নিয়ে টানাটানি করে। ডা. ফেরদৌস খন্দকারের বেলায় সেটাই হচ্ছে।
সত্যিকার অর্থে যদি কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে ডা. ফেরদৌস খন্দকার দ্বারা আমি অবশ্যই তার পাশে থাকবো, আমার কলম সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারনে একজন মানুষকে, হেনস্তা করবেন তা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমাদের দেশে গুণীদের মূল্যায়ন হয় না জানি, এখন দেখছি প্রবাসে ও আমরা গুণীদের মূল্যায়ন করি না। তার ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমি বলছি না তিনি মহামানব, বলছি, তার ভালো কাজের যেটুকু সম্মান প্রাপ্য সে সম্মানটুকু তাকে দিন। আমেরিকাতে দেশের একজন মানুষ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে এতো আমাদের জন্য গর্বের। শুধু ডা. ফেরদৌস কেন, প্রবাসে দেশের যে কোন মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে এটা ভাবতেই তো ভালো লাগে।
অনেকে বলছেন, তিনি নিজেকে প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। একজন ডাক্তার হয়ে এত প্রচারণা কেন ?
তাতে সমস্যা কি? আপনিও কোন ভালো কাজ করে প্রচারণা করেন আপনাকে তো কেউ বাধা দেয়নি। ডা. ফেরদৌস কি আপনাকে বলেছে যে, আপনি প্রচারণা করতে পারবেন না ?? কিংবা
আসেন আমার ভিডিও দেখেন ? আপনার ভালো না লাগলে আপনি তার ভিডিও এভয়েড করেন। তো আপনারা এখন কি করছেন ? তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে তো, পিটিশন প্রচারণাই করছেন নিজেদের। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আমরা নিজেরা কোন ভালো কাজ করি না অন্যকে ও করতে দেই না। একজন সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে শতজন পেছন থেকে টেনে ধরি। এইধারা বহু আগে থেকে চলে আসছে এবং এর থেকে আমরা প্রবাসে বাস করেও উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েও এখনো বের হতে পারিনি।
ছোটবেলায় স্কুলে পড়েছিলাম” তুমি অধম তাই বলে আমি উত্তম হইব না কেন’ আপনাদের দৃষ্টিতে যদি ডা. ফেরদৌস খন্দকার খারাপ কাজ করে থাকেন ,তাহলে আপনাদের উচিত ছিল তার থেকে ভালো কাজ করে দেখিয়ে দেয়া। তাকে বুঝিয়ে দেয়া যে তুমি শুধু একা নও আমরা ভালো কাজ করি। কিন্তু তা না করে উলটা তাকে টেনেহেচরে নীচে নামানোর চেষ্টা করছেন। আপনারাও তো শিক্ষিত। যে শিক্ষা আপনাকে মহৎ বানাতে পারেনি, যে শিক্ষা আপনাকে উদার বানাতে পারেনি, মনের দীনতা কুলসমুক্ত করতে পারেনি সে শিক্ষা তো শুধু সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ। প্রতিযোগিতা করুন ভালো কিছুর সাথে। তাকে অধম বলে মনে হলে তো আপনি উত্তম হবেন, এখন দেখছি আপনারা আরও অধম হচ্ছেন।
এখন আপনার তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনছেন,যখন নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসের প্রকোপ তুঙ্গে তখন কি করছিলেন আপনারা ? তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিলেন, এখন তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলছেন, কি অকৃতজ্ঞ আপনারা !!
অনেকে বলছেন তার রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল বলেই তিনি প্রচারণা করেছেন নিজেকে। আমি তো তাতে দোষের কিছু দেখি না। একজন নাগরিক হিসাবে তিনি তা করতেই পারেন। আপনি ও পারেন। সে কি দল করল না লীগ করল সেটা কেন দেখছেন ? চিকিৎসক হিসাবে সে ভালো কিনা, মানুষ হিসাবে সে ভালো কিনা আপনি সেটা দেখেন। ডা. ফেরদৌস কি দুর্নীতিবাজ ? ব্যাংক লুট করছে, শেয়ার বাজার লুট করছে? চিকিতসক হিসাবে ভুল ঔষধ দিয়েছে ? ধান্দাবাজী করছে ? ভন্ডামি করছে ? জঙ্গীবাদের সাথে জড়িত ?
উত্তর হল না। তিনি এগুলো কিছুই করেননি। তাহলে তিনি রাজনীতিতে আসলে সমস্যা কোথায় ?কত দুর্নীতিবাজ রাজনীতিতে আসে তাতে সমস্যা হয় না, ফেরদোউস আসলে সমস্যা ? আপনারাই বলছেন রাজনীতিতে ভালো লোক নেই আবার ভালো কেউ আসতে চাইলে তাকে স্বাগত না জানিয়ে তিরস্কার করেন ? কি দ্বৈত চরিত্র আমাদের। এমন কি তাকে খুনী , বিশ্বাসঘাতক মোশতাক-রশীদের আত্মীয় বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। যা ছিল ডাহা মিথ্যা।
শহীদ ইসলাম পাপুল একজন সাংসদ। বর্তমানে কুয়েতে জেলে আছে তার অপকর্মের জন্য। মানব পাচার করে তিনি সংসদে বসতে পারেন অথচ ডা. ফেরদৌস রাজনীতিতে আসতে পারবেন না, কেন ?
আসলে আপনাদের মনের মধ্যে হিংসার আগুন। যে হিংসার আগুনে তাকে পোড়াতে চাইছেন। তাতে লাভ কতটুকু হবে জানিনা, তবে এটুকু বলতে পারি অন্যকে টেনে যখন নিচে নামাবেন তখন আপনাকেও নীচে নামতে হবে। আমরা বাঙ্গালীরা নিজের যাত্রা ভঙ্গ করে হলেও আমরা অন্যের ক্ষতি করা থেকে পিছ পা হই না। অপ্রিয় হলে ও এটাই আমাদের চরিত্র।
আমরা কতটা নীচে নামতে পারি তা এতদিন দেশের মানুষ দেখেছে। এখন বিদেশীরা দেখবে আর আমাদের দিকে আঙুলতুলে বলবে, যে দেশের মানুষ নিজেরাই নিজেদের মধ্যে এত বিভেদ, সম্মান দিতে জানে না তারা আমাদের সম্মান দিবে কিভাবে !! এখনও সময় আছে, প্রবাসে এইসব পিটিশন কাজের পেছনে সময় ব্যয় না করে বরং যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ান। এতে আপনাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না। পরিশেষে একটা ছোট ঘটনা বলে শেষ করছি,
একবার এক শিক্ষক তাঁর ছাত্রদেরকে ব্ল্যাকবোর্ডে একটা সরল রেখা টেনে বলল, এই রেখাটা না মুছে এটাকে কে ছোট করতে পারবে ? ছাত্রদের মধ্যে কেউ পারেনি।
তখন শিক্ষক এই সরল রেখার নীচে বড় করে আরেকটা সরল রেখা টানল। তারপর বলল, অন্যকে ছোট করতে হলে তার থেকে বড় কাজ করে যাও, ভালো কাজ করে যাও তাহলে সে এমনিতেই ছোট হয়ে যাবে’ । হিংসা বা বিদ্বেষে কেউ ছোট হয় না,বরং যারা হিংসা করে তাদের মনের কুৎসিত চেহারাটাই সবাই দেখতে পায় ।

--------------------------------- 

লেখক: এম আর ফারজানা
গণমাধ্যমকর্মী, নিউ জার্সি

 

উপরে