শিরোনাম
৮ নভেম্বর লন্ডনে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া! যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের জার্মানিতে ইরানের সব কনস্যুলেট বন্ধ ঘোষণা কড়া নিরাপত্তায় নয়াদিল্লির বাংলোয় আছেন শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে দাঁতভাঙা জবাব পাবে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র: খামেনি নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 19 June, 2021 00:17

প্রবাসীদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং পরিবারের ভূমিকা

প্রবাসীদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং পরিবারের ভূমিকা

রিয়াজুল হক:  
ছোট একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করছি। রফিক (ছদ্মনাম) চার বোনের একমাত্র ছোট ভাই। বাবার একটি ছোট চায়ের দোকানের আয়ে অভাব অনটনে চলত তাদের সংসার। খুব ছোট থাকতেই আল-আমিন বাবাকে চায়ের দোকানে সাহায্য করত। কিন্তু সংসারের অভাব অনটন যাচ্ছিল না। ২০০৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে কাজের জন্য বাহরাইন চলে যায়। বেতনের প্রায় সবটুকুই দেশে পাঠিয়ে দেয়। বাবা-মা এখন একটা ভালো বাসায় থাকে। বাবাকে আগের মতো দোকান চালাতে হয়না। দেশে সংসার এখন ভালই চলছে। কিন্তু এতগুলো বছর কেমন কাটছে বাহরাইনে রফিকের সময়? সারাদিন কাজের পর, বাড়তি কিছু আয়ের জন্য সাধ্যমতো ওভারটাইম করে। রান্নার কাজ থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ নিজেকেই করতে হয়। খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে সবকিছু। কিন্তু মনের মধ্যে কষ্ট অন্য জায়গায়। মাত্র দুই বার ঈদ-উল-ফিতরের সময় বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করার সুযোগ পেয়েছিল। দেশে যে চলে আসবে, সে সুযোগও নেই। কারণ বিগত বছরগুলোতে পরিবারের মানুষজন কিছুটা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। দেশে এসে রফিকের বাহরাইনের মত আয়ের কোন সুযোগই নাই। পরিবারের সবাইকে ভালো রাখতে বিদেশে থাকার কোন বিকল্প পথ রফিকের হাতে নেই।

পরিচিত অনেক প্রবাসীর সাথে যখন কথা হয়,তখন তারা পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে দেশে আসতে  ভয় পায়। কারণ তারা দেশে আসলেই বেকার হয়ে যায়। কোন কাজ পায় না। জীবিকার তাগিদে আমাদের দেশের প্রবাসীদের মধ্যে বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করে। অধিকাংশই নির্মাণ শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী কিংবা কায়িক শ্রম নির্ভর কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের টাকায় মাসে ৩০,০০০ কিংবা ৩৫,০০০ টাকা আয় করে। নিজের খরচ মিটিয়ে এই প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠায়। ১০/১২ বছর বিদেশে অমানুষিক পরিশ্রম করে করে যখন দেশে চলে আসে, তখন যেন অনেকেই অন্ধকার দেখতে পায়। মাসে মাসে যা পাঠিয়েছে, যেন কিছুই অবশিষ্ট নেই।

তথ্য মতে, ৫৭ ভাগ পরিবার প্রবাস আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করেন না। অর্থ খরচ করেন ভোগ্য পণ্য ব্যয়ে। বাকি ৪৩ শতাংশ পরিবারের ৭৪.৭৮ শতাংশ ব্যয় করে দালান কোঠা নির্মাণ, ফ্ল্যাট বা জমি কেনায়। খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবারের আরাম আয়েসের মাত্রায়। অথচ যে মানুষটি দিন রাত পরিশ্রম করে দেশে অর্থ প্রেরণ করছে, সে যখন দেশে আসবে সে হয়ত তার জন্য সঞ্চিত কিছুই দেখতে পাবে না। পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি এবং সচ্ছলতার কথা চিন্তা করে প্রবাসীরা দেশে আসারও সাহস করেন না। অথচ মন যে পরে থাকে তার প্রিয়জনদের কাছেই। যাদের স্বজন প্রবাসে অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের উচিত একটু হিসেব করে খরচ করা। ছোট ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ করা। সেটা মুদি দোকানও হতে পারে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, প্রবাসীদের নামে ব্যাংকে টাকাগুলো জমা রাখা। কারণ আজ যে মানষটি প্রবাসে অবস্থান করছে, সবসময় সে প্রবাসে থাকবে না। এক সময় দেশে আসবে। তার আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদের করতে হবে।


লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

উপরে