করোনার মধ্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম
॥ ফারজানা লাবনী॥
রাত ১টা বাজে। প্রায় ৪০ মিনিট খুলনার একটি হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ৬৫ বছর বয়সের সালেহা বেগম। পাশে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে শোয়া আছেন তাঁর স্বামী আজিজ চৌধুরী। বয়স ৭২ বছর পার হয়েছে।
গত ছয় মাস থেকে আজিজ চৌধুরীর দু’টো কিডনি অকেজো হয়ে গিয়েছে। সপ্তাহে দু’টো করে ডায়ালিসিস দিতে হয়। সন্ধ্যা থেকে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সালেহা বেগম রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখলেন শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় কি না। কিন্তু শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। করোনাব্যাধির সংক্রমণের মধ্যে রাস্তাঘাটে লোকজন নেই। অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। বাসায় আজিজ চৌধুরী আর সালেহা বেগম দুই জনই থাকেন। তাদের তিন মেয়ে আর এক ছেলে। বড় মেয়ে জামাইসহ ঢাকাতে আছেন। বাকি সন্তানরা বিদেশে। নিরুপায় হয়ে সালেহা বেগম তাদের সামনের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী লিটন ও রিয়াদকে আজিজ সাহেবের অসুস্থতার কথা জানিয়ে একটা অ্যাম্বুলেন্স ঢেকে দিতে অনুরোধ করেন।
লিটন ও রিয়াদ বিভিন্ন জায়গায় মোবাইলে খোঁজ খবর নিয়ে রাত ১১টায় একটি অ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করতে পারে। অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভাররা ফোন পেয়ে প্রথমেই জানতে চায় রোগীর কি করোনা হয়েছে? করোনা রোগের লক্ষণ আছে কি না, গায়ে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না এসব। আগে দুই একবার আজিজ সাহেব অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করতে এত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি এতটা সময় লাগেনি। সালেহা বেগম ভাবেন, মানুষ করোনা আতংকে ভুগছে, একজন ড্রাইভারের এরোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষা করার সরঞ্জামাদি নেই। তাই এমন আচরণ। আজিজ সাহেবকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর পর লিটনও সঙ্গে যায়।
আজিজ সহেবকে নিয়ে সালেহা বেগম সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে যে হাসপাতালে যান সেখানেই এসেছেন। হাসপাতালটা খুলনার মধ্যে ভালোমানের হাসপাতালগুলোর একটি। সালেহা বেগম অ্যাম্বুলেন্স থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার অস্থির লাগছে।
আজিজ সাহেবের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। গেটের দারোয়ান তো ঢুকতেই দিবে না। অনেক অনুরোধ করে, হাতের মধ্যে একশ টাকার একটা নোট গুজে দিয়ে তারপর লিটনকে একা ভিতরে যেতে দিয়েছে। অথচ এই দারোয়ান কতদিন ডায়ালাইসিস্ করে বের হওয়ার পরে তিন চাকার ইজি বাইক ডেকে দিয়েছে আজিজ সাহেব আর সালেহা বেগমকে।
লিটনকে গেট থেকে বের হতে দেখে সালেহা বেগম এগিয়ে যান। কাছে আসতেই লিটন বললো, চাচি এরা চাচাকে ভর্তি করাবে না। করোনার সময়ে এখন রাতে নতুন রোগি নেবে না।
সালেহা বেগম বুঝতে পারছেন না, এখন কি করবেন। বললেন, বাবা তোমার চাচা এখানকার ডায়ালাইসিসের রোগী। আগামীকাল উনার ডায়ালাইসিসের তারিখ আছে। অনেকবারই ডায়ালাইসিসের আগের রাতে উনার শ্বাসকষ্ট হয়েছে। রাতে অক্সিজেন দিয়ে রেখে ডাক্তার ওষুধ দিলে সকালে ডায়ালাইসিস্ করানোর পর ভালো হয়ে যায়। এখানকার ডায়ালাইসিস্ ইউনিটের অনেকে জানেন বিষয়টা। রিসিপশনের লোকদের এটা বুঝিয়ে বলো। এত রাতে তোমার চাচাকে নিয়ে কোথায় যাবো?
লিটন বলে, চাচি এরা আমার কোনো কথাই শুনতে চায় না। শ্বাসকষ্ট শুনে ভেবেছে করোনার রোগী। বলেছে এক্স-রে ও কিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখে ভর্তি করাতে হবে। এখন রাতের বেলা লোক নাই। সকালে আসতে বলেছে।
লিটন বলে, আমি তাদের বলেছি চাচার কিডনির সমস্যা। আগের কাগজপত্র দেখিয়েছি। এখানে ডায়ালাইসিস করে তাও বলেছি। ওরা বলেছে ঠিক আছে। কিন্তু করোনার মধ্যে রোগি পরীক্ষা না করে হাসপাতালে ঢোকানো যাবে না।
সালেহা বেগম নিরুপায় হয়ে বলেন, আমাকে নিয়ে চল। আমি ওদের হাতে পায়ে ধরি।
একথা বলে সালেহা বেগম নিজেই এগিয়ে গেলেন। লিটন সালেহা বেগমের পিছন পিছন হেঁটে গেল। দারোয়ান বাঁধা দিয়ে বলে, ভিতরে যাওয়া যাবে না। আমার চাকরি খাইতে চান। বার বার ভিতরে যাচ্ছেন। অন্য জায়গায় যান। সালেহা বেগম অনুনয় করে বলেন, তোমার চাচাকে নিয়ে সপ্তাহে দুই তিনবার এখানে আসি। তোমাকে আমি চিনি। তোমার চাচা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উনাকে ভর্তি করাতে হবে।
সালেহা বেগম রিসিপশনের ওপাশে থাকা ছেলেটাকে বললেন, বাবা তোমার কাছেও ত কত বার আমি ডায়ালাইসিস্ করানোর টাকা জমা দিয়েছি। তোমার চাচাকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেও।
ছেলেটা বললো, আন্টি কোন উপায় নেই। ভিতরে একজন ডিউটি ডাক্তার আছেন। কয়েকবার ফোন করেছি। ধরেন না। এখানে আপনি কাকে দেখাবেন? করোনা ধরা পড়ার পর এখানে সিনিয়র ডাক্তারদের বেশির ভাগই আসেন না। হঠাৎ দুই এক জন এসে দুই চারটা রোগি দেখে চলে যায়। ডিউটি ডাক্তারদের সঙ্গে মোবাইলে রোগীর ওষুধ পাল্টায়, টেষ্ট দেয়।
এই হাসপাতালে আসতে আসতে এখানকার অনেক স্টাফ, নার্স, ডাক্তারের সঙ্গে চেনা জানা হয়েছে। তারা দুই জন বয়স্ক মানুষ আসেন বলেও হাসপাতালের অনেকে এগিয়ে এসে কথা বলেন সাহায্য করেন। আজকে এমন পরিচিত এক জন পাশ থেকে হেঁটে গেলেও সাহেলা বেগমের সঙ্গে কথা বললো না।
সালেহা বেগম বলেন, হয়ত ভেবেছে করোনার রোগি নিয়ে এসেছি সাহায্য চাইতে পারি। করোনা মানুষকে কি দ্রুত বদলে দিচ্ছে!
লিটনের মোবাইল বেজে উঠে। ড্রাইভার ফোন দিয়ে বলে, রোগীর অবস্থা খারাপ। যা করার তাড়াতাড়ি করেন।
সালেহা বেগম আর লিটন দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন। আরো তিনটা হাসপাতাল ঘুরে রাত ৪টার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে আসেন। লিটন রিসেপশনে বসা ছেলেটাকে আজিজ সাহেবের ভর্তির বিষয়ে কথা বলে। পাশে দাঁড়িয়ে সালেহা বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে বার বার চোখের জল মুছতে থাকেন।
ছেলেটা বললো, মা কাঁদবেন না। দেখি কি করা যায়। ভর্তির ব্যবস্থা হয়ত করে দিতে পারবো। কিন্তু এখানে ডাক্তার কোথায় পাবেন ? ডাক্তার ত আসে না। ভিআইপি রোগিরা কল করলে এসে দেখে চলে যায়।
৩৫/৪০ মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন ফর্মালিটিজ শেষে আজিজ চৌধুরীকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
গত দুই দিন থেকে এখানে ভর্তি আছেন আজিজ সাহেব। ডিউটি ডাক্তাররা আসেন হাপসপাতালে। সিনিয়র ডাক্তারদের খোঁজ নেই। রোগীর পর রোগী আসছে। অনেকে অপেক্ষা করে ডাক্তার না পেয়ে চলে যাচ্ছে। বেশি অসুস্থরা ভর্তি হচ্ছে। দিনের মধ্যে একবার ডিউটি ডাক্তাররা আসেন। ভর্তির দুই দিন পার হলেও আজিজ সাহেবকে দেখতে কোনো সিনিয়র ডাক্তার আসেননি।
ঢাকাতে সালেহা বেগমের বড় জামাই ব্যবসা করেন এবং বড় মেয়ে চাকরি করেন। মেঝো মেয়ে ও তার জামাই দুই জনই মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ছোট মেয়ে আমেরিকায় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এক মাত্র ছেলে প্রায় সাত বছর হল কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে গিয়েছেন। এখন পিএইচডি করছে। ছেলে-মেয়ে-জামাইরা নিয়মিত মোবাইলে মা-বাবার খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন। ভাইবার, মেসেনজার, হোয়াটস্অ্যাপে তারা বাবা-মাকে ভিডিও কলে দেখে শরীর কেমন আছে, ওষুধ খেয়েছে কি না এসব জানতে চায়। আজিজ সাহেব এবং সালেহা বেগমের দেখাশোনা করার জন্য বাসায় স্থায়ীভাবে ২৯ বছরের একজন গৃহপরিচালিকা ছিল। ওর নাম রুনু।
মাস দু’য়েক হল বিশ্বব্যাপী করোনাব্যাধির সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন করোনা রোগি সনাক্ত হচ্ছে। করোনাব্যাধির সংক্রমণরোধে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা লকডাউন করা হয়েছে। আর্ন্তজাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিত্যপণ্য, ওষুধ, রোগি, লাশ বহনকারী গাড়িসহ অতি জরুরি কাজে ব্যবহৃত পরিবহন ছাড়া সকল পরিবহন চলাচল বন্ধে এবং অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে সরকারি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশ মানছে কিনা তা নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এতসব কড়াকড়ি চললেও সালেহা বেগমকে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন বাসা থেকে বের হতে হয়। করোনার মধ্যে পরিবহন বন্ধের আগে গৃহপরিচালিকা রুনু তার মায়ের কাছে চলে গিয়েছে। করোনাব্যাধি সংক্রমণরোধে খুলনার যে এলাকাতে আজিজ সাহেব এবং সালেহা বেগম থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এলাকাতে নতুন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এতে আজিজ সাহেবের বাসায় নতুন কোন গৃহপরিচালিকা নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। আজিজ সাহেব ঠিক মত চলাফেরা করতে পারেন না। গৃহপরিচালিকা না থাকায় সালেহা বেগমকেই বাসাবাড়ির সব কাজ করতে হচ্ছে।
আজিজ সাহেব ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে তাকে ধরে নিয়ে যেতে হয়। আজিজ সাহেবকে গোসল করানো, কাপড় পরানো, খাবার খাওয়ানো, ওষুধ খাওয়ানো, ইনসুলিন দেয়াসহ সবই সালেহা বেগমকে করতে হচ্ছে। অনেক সময় বিছানায় বাথরুমও করে দেন আজিজ সাহেব। এটাও পরিস্কার করতে হয় সালেহা বেগমকে।
রুনু থাকলে এর অনেক কিছুই তার সহযোগিতায় করতেন। অনেক কিছু আবার রুনু একাই করত। রুনু না থাকায় রান্নাবান্নাও এখন সালেহা বেগম করছেন। দুইজন বয়স্ক মানুষকে বেশ যত্ন করত মেয়েটা। মেয়েটার স্বামী মারা গিয়েছে, চার বছরের একটা মেয়েটা আছে। বৃদ্ধা মায়ের কাছে বাচ্চাটাকে রেখে এসেছে। মাস গেলে তার বেতনের টাকা পাঠিয়ে দিত। রুনুর মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে বাড়ি যেতে চায়। এই করোনার মধ্যে রুনুর বাচ্চাটা কার কাছে যাবে, কে দেখবে এসব ভেবে সালেহা বেগম গৃহপরিচালিকা মেয়েটাকে যাবার অনুমতি দিয়েছে। রুনু সালেহা বেগমকে মোবাইল করে জানিয়েছে করোনায় বাস বন্ধ আছে, চালু হলেই আসবে।
করোনায় আগে ডায়ালাইসিস্ করাতে ভাড়া করা গাড়িতে নিয়ে যেতেন। রুনু, গাড়ির ড্রাইভার আর সালেহা বেগম তিনজনে ধরে আজিজ সাহেবকে দুই তলা থেকে নামিয়ে গাড়িতে উঠান, এরপর গাড়ি থেকে নামিয়ে হাসপাতালে ঢোকান, ডায়ালাইসিস্ শেষে আবার বাসায় আনেন।
করোনার মধ্যে আজিজ সাহেবকে ডায়ালাইসিস্ করানো সালেহা বেগমের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
করোনার মধ্যে গাড়ি চলাচল নিষেধ থাকায় গাড়ি যোগাড়ে সালেহা বেগমকে বাসা থেকে বের হয়ে বেশ খানিকটা পথ হেঁটে প্রধান রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করতে থাকা গাড়ি হাত নেড়ে থামিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা বলেন, বাড়তি ভাড়া দিবেন জানান। এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা/ এক ঘণ্টা চেষ্টার পর গাড়ি যোগাড় হয়। সালেহা বেগম অ্যাম্বুলেন্সে করেও দুই একবার নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু করোনার রোগী নিতে হবে এই আশংকায় অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভাররা এখন ফোনই ধরতে চায় না। অনেকবার চেষ্টা করলে দুই এক জনকে পাওয়া যায়। এর চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি যোগাড় করা সহজ মনে করেন সালেহা বেগম। করোনার মধ্যে আত্মীয়স্বজনও ঘর থেকে বের হতে চান না। কাউকে নিজেদের কোন কাজ করতে অনুরোধ করে বিব্রত করতে চান সালেহা বেগম।
করোনার মধ্যে ত আর খাওয়া বন্ধ করা যায় না। করোনা না থাকলে ভ্যান গাড়িতে করে রাস্তায় তরকারি আনলে বাসা-বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁচা বাজার সারতেন। রুনু নিচে গিয়ে তরকারি নিয়ে আসত। রুনুকে টাকা দিলে চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য বাজার করে আনত। এখন একাই যান বাজার করতে। রিকশাওয়ালাকে বাড়তি টাকা দিয়ে বাজার নিচে থেকে দুই তলায় ওঠান। আজিজ সাহেব এবং সালেহা বেগমের বিভিন্ন রকমের ওষুধপত্র লাগে। যেদিন ডায়ালাইসিসের জন্য বের হন সেদিনই ওষুধ কিনে আনেন।
ছেলে-মেয়ে-জামাইরা মোবাইলে বাবা মার সঙ্গে কথা বলেন। সাবধানে থাকতে বলেন। সালেহা বেগম তাদেরকে প্রতি দিনের এই সংগ্রামের কিছুই জানান না। করোনাকালীন সময়ে যেখানে মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না সেখানে তিনি কিভাবে চলছেন তা বলেন না। তিনি মনে করেন জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ছেলেমেয়েরা দূরে আছে। সেখানেই ভালো থাকুক।
বাবা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শুনে বড় মেয়ে-জামাই ঢাকা থেকে খুলনা আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় আসতে পারছে না। বিদেশে থাকা সন্তানরাও আসতে চাইছে। করোনার কারণে আর্ন্তজাতিক এবং অভ্যন্তরীণ সকল বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারাও আসতে পারছে না।
সালেহা বেগমের ডায়বেটিস্, হাই প্রেশার, নার্ভের সমস্যা এবং হাড় ক্ষয়ের রোগ আছে। তিনি জানেন, এসব রোগ থাকলে করোনায় আক্রান্ত হবার আশংকা বেশি থাকে। কিন্তু অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে এছাড়া তার আর কিবা করার আছে!
৫ মে পর্যন্ত লকডাউন দেয়া হয়। সালেহা বেগম আশা করেছিলেন লকডাউন উঠে যাবে। বাস চলাচল করলে গৃহপরিচালিকা রুনু আসতে চেয়েছে। রুনু আসলেও অনেকটা উপকার হত। তার কষ্ট কমত। এখন আবার ১৬ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।
আজিজ চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি। সকাল থেকে আজিজ সাহেব সব কথা বলতে পারছেন না। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর দু’একটা শব্দ বলছেন। আত্মীয়স্বজনদের দু’একজন মুখে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস পরে আজিজ সাহেবকে হাসপাতালে দেখতে আসছেন। করোনাব্যাধি সংক্রমণের আশংকায় দেখে দ্রুত চলে যাচ্ছেন। করোনাব্যাধির এই প্রকোপ না থাকলে তারা হয়ত আরো কিছু সময় বা অনেকে সালেহা বেগমের কাছে হাসপাতালে থেকে যেত।
লেখক: ফারজানা লাবনী
সিনিয়র সাংবাদিক-দৈনিক কালেরকন্ঠ