রেকর্ড গোলে রোনালদোকে ছাড়ালেন মেসি

বর্তমান সময়ে নিজের ফুটবল শৈলী দিয়ে বিশ্বকে মোহিত করে রেখেছেন এলএমটেন খ্যাত আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর। মেসি মানেই পায়ের জাদুতে মোহিত হবে ফুটবল বিশ্ব। তটস্থ থাকবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স, গোলরক্ষক। ম্যাচে হবে গোলের ফুলঝুরি।
গোল করবেন আবার সতীর্থদের দিয়ে গোল করাবেন। তার পা ফুটবল মাঠে শিল্পী হয়ে এঁকে যাবে নতুন শিল্প। গতরাতে ন্যু ক্যাম্পে তাই ঘটেছিল। মাঠে শুধু দর্শক হয়ে ছিলেন চেলসির কোচ ও ভক্তরা। চেয়ে চেয়ে শুধু দেখলেন। কিভাবে গোল করতে হয় আর করাতে হয়।
লিওনেল মেসি মাঠে নামবেন আর নতুন কীর্তির জন্ম দিবেন না এটা কি কল্পনা করা যায়? যায় না। তাই তো গতরাতে আরও একটি মাইলফলক গড়লেন। এ দিন বার্সেলোনার হোম অব ফুটবল নামে পরিচিত ন্যূ ক্যাম্পে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের ১০০তম গোলটি করে ফেললেন ক্ষুদে জাদুকর। আর এ গোলের মাধ্যমে পিছনে ফেললেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে।
চেলসির বিপক্ষে ম্যাচের এক পর্যায়ে টেন নেটওয়ার্কের ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, মেসির খেলা দেখাটাও সৌভাগ্য। পৃথিবীর সেরা ফুটবলার সে। অন্যান্য অনেকে অনেক গোল করলেও মেসির মতো এরকম চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলে গোল করতে কেউ পারেনি। আসলে মেসি অনন্য। মেসির তুলনা শুধু মেসি নিজেই।
চেলসির বিপক্ষে ফিরতি লেগে প্রথমে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের দ্রুততম গোলটি করেন লিওনেল মেসি। এরপর করেন সেঞ্চুরি। প্রথম গোলটি ছিল তার চ্যাম্পিয়নস লিগে ৯৯তম গোল। আর পরেরটি ছিল ১০০তম গোল। ম্যাচের বয়স তখন ২ মিনিট ৮ সেকেন্ড (১২৮ সেকেন্ড)। ডি বক্সের ডানপ্রান্তে সুয়ারেজের কাছ থেকে বল পেয়ে কোনাকুনি শট নেন মেসি। বল জালে আশ্রয় নেয়। এরপর ৬৩ মিনিটে সুয়ারেজের কাছ থেকে বল পেয়ে চেলসির গোলরক্ষক থাইবার্ট কোর্টোইসের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন। পূর্ণ করেন চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের শততম গোল।
তার ১০০ গোলের ৪টি করেছেন হেড দিয়ে। ১৫টি করেছেন ডান পায়ের শটে। আর ৮১টি করেছেন বাম পায়ের শটে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০০ গোল করতে তার সময় লেগেছে ১২ বছর। ২০০৫ সালের ২ নভেম্বর গ্রীসের ক্লাব পানাথিনাইকোর বিপক্ষে প্রথম গোল করেছিলেন তিনি। আর ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ চেলসির বিপক্ষে করলেন শততম গোল।
তার ১০০ গোলের ৪১টি করেছেন অ্যাওয়ে ম্যাচে। আর ৫৭টি করেছেন ন্যু ক্যাম্পে। ২টি গোল এসেছে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে।
ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘১০০’ গোলের ক্লাবে প্রবেশ করলেন মেসি। তার আগে রিয়াল মাদ্রিদের প্রাণভোমরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো প্রথম কোনো খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘১০০’ গোলের ক্লাবে প্রবেশ করেছিলেন। বর্তমানে রোনালদোর মোট গোল ১১৭টি। যা তিনি ১৪৮ ম্যাচে করেছেন। আর মেসি ১০০ গোল করেছেন ১২৩ ম্যাচে।
মেসির যেখানে ১০০ গোল করতে লেগেছে ১২৩ ম্যাচ সেখানে রোনালদোর লেগেছিল ১৩৭ ম্যাচ। শুধু তাই নয় ১০০ গোল করার দৌড়ে রোনালদোর থেকে ১৭৫৮ মিনিট কম খেলেছেন মেসি। রোনালদো যেখানে ১০০ গোল করতে শট করেছেন ৭৯০টি, মেসি সেখানে শট নিয়েছেন ৫২৪টি।
শত গোলের ভেতর সবথেকে বেশি ৯টি গোল করেছেন আর্সেনালের বিপক্ষে। অন্যদিকে এসি মিলান এবং সেল্টিকের বিপক্ষে করেছেন ৮ গোল।
মেসির পরে চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন তারকা রাউল। তিনি ১৪২ ম্যাচে করেছেন ৭১ গোল। রুড ভন নিস্টলরই ৭৩ ম্যাচে করেছিলেন ৫৬ গোল। তালিকায় পঞ্চম স্থানে থাকা করিম বেনজেমা ১০০ ম্যাচে করেছেন ৫৩ গোল।
চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০০ গোল করার পাশাপাশি উয়েফা ইউরোপা লিগেও ৩টি গোল করেছেন মেসি। তাতে উয়েফার লিগে তার মোট গোল ১০৩টি।
এদিকে ম্যাচ শেষে নিজ ও দলের অর্জনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বার্সা সুপারস্টার বলেন, এমন সুন্দর একটা প্রতিযোগিতায় ১০০ গোলের মাইলফলক ছুঁতে পেরে আমি ভীষণ খুশি। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল, দারুণ সব খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একটি দলের বিপক্ষে কঠিন একটি ম্যাচে এগিয়ে থাকা। আমরা শুরুতেই গোল পেয়ে যাই, যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল।
যা ফল হয়েছে, তাতে খুশি মেসি। তবে তৃতীয় গোলটা হওয়ার আগেও বার্সেলোনা নির্ভার হয়ে পড়েনি, জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন এই জাদুকর, যা হয়েছে, আমি এখন খুশি। এটা কঠিন একটা ম্যাচ ছিল, আমরাও দল হিসেবে খুব শক্তিশালী ছিলাম। যখন আমরা তৃতীয় গোলটি করি, তখন আসলে ম্যাচটা কার্যত আমাদের দিকে হেলে পড়ে।
ম্যাচশেষে মেসির ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রতিপক্ষ চেলসির কোচ আন্তোনিও কন্তেও। এই বিষয়টি মেসির নজরে আনা হলে বার্সা সুপারস্টার বলেন, আমি তার কথা শুনিনি। তবে তাদের কাছ থেকে শুনেছি, তিনি কি বলেছেন। তার এমন কথার জন্য ধন্যবাদ।