বিশ্বকাপে দ্যুতি ছড়াবেন যারা
প্রতি চার বছর পর পর আসে ফুটবল বিশ্বকাপ। সেটির জন্য অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকেন বিশ্বের কোটি ফুটবল অনুরাগী। এবার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বসছে রাশিয়ায়। ১৪ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে ৩২ দলের ময়দানি লড়াই।
ফুটবলের মহোৎসবে বড় দলগুলোতে বাঘা সব তারকার ছড়াছড়ি। তবে ছোট দলেও অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা মুহূর্তেই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন। তাদের দিকেও চোখ থাকছে ভক্ত-সমর্থক ও ফুটবলপ্রেমীদের।
সব মিলিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপে কারা আলো ছড়াতে পারেন সম্ভাব্য সেই তালিকাটা দেখে নেয়া যাক:
লিওনেল মেসি
এটি হতে পারে এ আর্জেন্টাইন মায়েস্ত্রোরও শেষ বিশ্বকাপ। বাছাইপর্বটা খুবই বাজে কেটেছে আর্জেন্টিনার। বাঁচামরার ম্যাচে ইউকুয়েডরের বিপক্ষে স্বর্গীয় বাঁ পায়ের হ্যাটট্রিকে দলকে পাইয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার টিকিট। যে দলে ছোট ম্যাজিসিয়ান আছেন সে দলকে কোনোভাবেই পেছনে রাখার উপায় নেই। ক্লাব বার্সোলোনার হয়ে সব জিতেছেন তিনি। এবার বিশ্বকাপ জিতে অমরত্ব চাইবেন এ গোলমেশিন। গেল বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে পরাজয়ের বেদনাদায়ক স্মৃতি তিনি নিশ্চয়ই ভুলতে চাইবেন এবার রাশিয়ায়।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
রাশিয়াই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। এই বিশ্বকাপটা তাই স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলতে যাচ্ছে ৩২ বছর বয়সী ফুটবলারের দেশ পর্তুগাল। কখনই তারা বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পায়নি। পর্তুগিজরা ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো তাদের সামর্থ্য আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় সবার। কিন্তু ব্যক্তি সিআর সেভেনের নৈপুণ্যে রাশিয়া মাতবে তাতে নিশ্চিত সবাই।
নেইমার
গত বছর ট্রান্সফার ফির বিশ্বরেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে পাড়ি জমান তিনি। মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে যেন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিলেন তিনি। তবে আচমকা ইনজুরি তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফ্রেঞ্চ লিগে মার্সেইয়ের বিপক্ষে পা ভেঙে যায়। সফল অস্ত্রোপচার শেষে সেরে উঠছেন তিনি। সেলেকাওদের হেক্সা (ষষ্ঠ শিরোপা) মিশনে তুরুপের তাস এ তরুণ। ব্রাজিলের কোচ তিতের আশা, বিশ্বকাপেও বাছাইপর্ব ও ক্লাব ফুটবলের ফর্ম ধরে রাখবেন ২৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
মোহাম্মদ সালাহ
২৮ বছর পর ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে মিসর। বলার অপেক্ষা রাখে না, মোহাম্মদ সালাহর হাত ধরেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে আফ্রিকার দেশটি। লিভারপুলের হয়ে স্বপ্নের অভিষেক মৌসুম কাটাচ্ছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্য ফারাওখ্যাত ফরোয়ার্ডের ওপর আলাদাভাবে দৃষ্টি থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের।
ডি মারিয়া
সময়ের অন্যতম সেরা স্টাইলিশ উইঙ্গার। সামর্থ্য, দক্ষতা ও প্রতিভা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জ্বলে উঠলে যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে পারেন তিনি। পিএসজিকে ট্রেবল জেতাতেও রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা। লাইমলাইট থাকছে তার ওপরও।
লুইস সুয়ারেজ
বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপে ফুটবলবিশ্ব শাসন করেছে দলটি। এখন আর সেই জৌলুস নেই তাদের। তবে ফের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ফিরে আসছেন উরুগুইয়ানরা। গেল কয়েক বছরে ভালোভাবেই তার ছিটেফোঁটা পাওয়া গেছে। নিজেদের সেই গৌরবোজ্জ্বল অতীত ফিরে পেতে শুরু করেছে লাতিন আমেরিকার দলটি।উরুগুয়ের এ পুনরুত্থানের নেপথ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন সুয়ারেজ। ২০১৮ বিশ্বকাপে সন্দেহাতীতভাবেই সুয়ারেজ বড় ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবেন।
কিলিয়ান এমবাপে
পিএসজির হয়ে খেলা ১৯ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড গেল কয়েক বছর ধরেই দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এ সময়ে লুফে নিয়েছেন বিশ্বের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ফুটবলাকাশে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত এ তারার স্বপ্ন বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে সাফল্য বয়ে এনে দেয়া। দারুণ ফর্মেও আছেন তিনি। পিএসজিকে ট্রেবল জেতাতে রেখেছেন অগ্রজ সেনানীর ভূমিকা। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া বিশ্বকাপে এই টগবগে তরুণের ওপর চোখ থাকবে সবার।
আঁতোয়া গ্রিজম্যান
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই লাইমলাইটে এ ফরাসি ফরোয়ার্ড। অনন্য নৈপুণ্যে এবার লা লিগায় নিজ দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে করেছেন রানার্সআপ। সময়ের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমারের কাতারে তাকে রাখেন অনেকে। ২০১৬ সালে দলকে ইউরো চ্যাম্পিয়ন করেই ছেড়েছিলেন তিনি। তবে ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়। এবার ব্যর্থতার সেই হিসাব নিশ্চয়ই মেলাতে চাইবেন ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। এই ইনফর্মার নিজেও তাকিয়ে রাশিয়ার দিকে।
এডেন হ্যাজার্ড
বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের প্রধান অস্ত্র এডেন হ্যাজার্ড। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন বেলজিয়ানরা। ২৬ বছর বয়সী এ উইঙ্গারের চোখও বিশ্বকাপে। দুর্দান্ত পারফরম করে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া তিনি। স্বাভাবিকভাবে নজর থাকছে চেলসি তারকার ওপরও।
টিমো ওয়ার্নার
গেল বছর কনফেডারেশন্স কাপ জয়ে জার্মানিকে পথ দেখিয়ে নিজেকে এর মধ্যে প্রমাণ করেছেন তিনি। সেই টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বুট জেতা এ তরুণ স্ট্রাইকার নিশ্চয়ই বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আবার সাফল্য এনে দিতে চাইবেন। রাশিয়ার বিশ্ব আসরেও জিততে চাইবেন কোনো পুরস্কার। তাই ২১ বছর বয়সী নবীন তারকার ওপরও চোখ থাকছে।
হ্যারি কেন
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে দেখা যাবে হ্যারি কেনকে। ওয়েন রুনির জায়গাটা এখন তারই। গেল কয়েক মৌসুম ধরেই বিশ্বসেরা পারফরমারদের একজন তিনি। প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দেয়ার সব সামর্থ্য তার আছে। টটেনহাম হটস্পারের তারকা চান, ইংলিশদের দীর্ঘদিনের শিরোপাখরা ঘোচাতে। স্পটলাইটে থাকছেন তিনিও।
ডেভিড ডি গিয়া
ক্যারিয়ার ততটা লম্বা নয়। তবে এরই মধ্যে নিজের সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। গোলবারের নিচে আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। চলতি মৌসুমে অনন্য নৈপুণ্য প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ফ্যানস ‘প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ জিতেছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গোল্ডেন গ্লোভও শোকেসে ভরেছেন তিনি। সঙ্গত কারণে এ স্পেন রক্ষাকর্তার ওপরও নজর থাকবে সবার।