শচীনকে উৎসর্গ করে ভারতের বিশ্বকাপ উদযাপনের দিন
২ এপ্রিল ২০১১। ক্রিকেট পাগল দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের প্রতিটি রাজ্য জুড়ে এদিন বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে উঠে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ- বণিতা সকলেই। আর এমন উল্লাসের সুযোগ করে দেয় দেশটির ক্রিকেটাররা।
১৯৮৪ সালে কপিল দেবের হাত ধরে প্রথমবার বিশ্ব ক্রিকেটের রাজত্ব পাওয়ার পর কেটে যায় দীর্ঘ ২৭ বছর। এরপর আর সেই আসনে আসীন হতে পারেনি তারা।
বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা এই তিন দেশ একযোগে দশম ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করে। আর এই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আয়োজক দেশ হওয়ার সুযোগ পায়। ঢাকার মিরপুরের শের-ই-বাংলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে এই বিশ্বকাপের উদ্বোধন হয়।
অন্যদিকে ভারতের মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচটিতে ভারত ৬ উইকেটে জয়লাভ করে। ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা। অপরদিকে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ভারতীয় দলে শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দ্র শেহওয়াগ, বিরাট কোহলি, গৌতম গাম্ভীর, যুবরাজ সিং, সুরেশ রায়না, জহির খান, হরভজন সিং যেমন ছিলেন তেমনি শ্রীলঙ্কা দলে ছিলেন উপল থারাঙ্গা, তিলকারত্নে দিলশান, মাহেলা জয়াবর্ধনে, লাসিথ মালিঙ্গা, মুত্তিয়া মুরালিধরণ, থিসারা পেরেরার মতো তারকারা।
লঙ্কানরা ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৭ রানেই থারাঙ্গার উইকেট হারিয়ে বসে। পরে দিলশান ও সাঙ্গাকারা দ্বিতীয় উইকেটে ৪৩ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। দলীয় ৬০ রানে দিলশান আউট হলেও সাঙ্গা একপাশে থেকে যান। জুটি গড়েন জয়াবর্ধনের সঙ্গে।
তৃতীয় উইকেটে দুইজন ৬২ রানের জুটি গড়ার পর নিজস্ব অর্ধশত পূরণের আগেই বিদায় নেন অধিনায়ক সাঙ্গা। পরে জয়াবর্ধনে দলের হাল ধরেন। সামারাবিরা, কাপুগেদারা, কুলাসেকারা ও থিসারা পেরেরার সঙ্গে জুটি বেঁধে দলীয় সংগ্রহ ২৭৪ রানে গিয়ে ঠেকান। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজের শতরান তুলে নেন। ৮৮ বল খেলে ১৩ চারের সাহায্যে ১০৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
ভারতের হয়ে জহির খান ও যুবরাজ সিং ২টি এবং হরভজন সিং একটি উইকেট লাভ করেন।
বিশ্বকাপ সোনালী ট্রফি দ্বিতীয়বারের মতো ছুঁয়ে দেখার আশায় ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে কোনও রান যোগ করার আগেই মালিঙ্গার বলে বিদায় নেন বীরেন্দ্র শেহওয়াগ। এরপর দলীয় ৩১ রানে ফেরত যান ভারতের ‘ব্যাটিং ঈশ্বর’ শচীন টেন্ডুলকার। এটিই ছিল ক্রিকেট কিংবদন্তির বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ।
এরপর গম্ভীর ও কোহলি তৃতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়ে সেই ধাক্কা সামাল দেন। কোহলি ৩৫ রান করে আউট হয়ে ফিরে যান। আরেক পার্টনার গম্ভীর তিন রানের জন্য ফাইনালে সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হন।
১২২ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৯৭ রান করে দলীয় ২২৩ রানে বিদায় নেন। এরপর অধিনায়ক ধোনি পঞ্চম উইকেটে যুবরাজকে সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজ সারেন। শেষ পর্যন্ত ধোনি ৭৯ বলে ৮ চার ও ২ ছয়ে ৯১ রান করে অপরাজিত থাকেন। যুবরাজ অপরাজিত ২৪ বলে ২১ রান করেন।
৪৮.২ ওভারের সময় অধিনায়ক ধোনি কুলাসেকারাকে ছয় মারার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন যুবরাজ। আর এতে করে ১০ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই ২৭ বছর পর বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তোলে স্বাগতিক ভারত।
ফাইনালে ৭৯ বলে অপরাজিত ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলায় সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাট হাতে অসাধারণ পারফর্ম করায় ভারতের যুবরাজ সিং টুর্নামেন্ট সেরার শিরোপা পান।
বিশ্বসেরার শিরোপা হাতে তোলার পর টিম ইন্ডিয়ার সদস্যরা নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা ক্রিকেটার শচীনকে এটি উৎসর্গ করে।