শিরোনাম
আগে চারজন দাঁড়াত, এখন একটা মারলে ৪০ জন দাঁড়াবে: ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত ৩ গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ নিয়ে সতর্কতা জার্মানির ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 5 October, 2020 01:36

তার কাছে জন্মদিন মানে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া

তার কাছে জন্মদিন মানে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া
মাশরাফি বিন মর্তুজা
ঢাকা অফিস :

তিনি একাধারে ক্রিকেটার, সংসদ সদস্য। মাঠের লড়াই শেষ করে যে সময়টা বিশ্রামে কাটানোর কথা সে সময়টা দিচ্ছেন নড়াইলের মানুষদের। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা যেন পুরদস্তর এক অল-রাউন্ডার। সেটা ক্রিকেটের মাঠ থেকে রাজনীতির মাঠে।

১৯৮৩ সালের আজকের দিনে (৫ অক্টোবর) চিত্রা পাড়ের মহিষখোলা গ্রামে জন্ম তার। বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন আর মা হামিদা মোর্ত্তজার কোলজুড়ে আসা ফুটফুটে কৌশিক যে আজকের ‘মাশরাফী’ হয়ে উঠবেন সেটা কে জানতো!

মজার ব্যাপার, একই দিনে ২০১৪ সালে মাশরাফি-সুমি দম্পতির কোল জুড়ে আসে ছেলে সাহেল। বাবা-ছেলে দুজনকেই শুভেচ্ছা জন্মদিনের।

মাশরাফী অবশ্য জন্মদিনটাকে দেখেন অন্য দশটা দিন থেকে আলাদা। এ দিনেই তো জীবন থেকে হারিয়ে যায় আরও একটা বছর। তার মতে, মৃত্যুর দিকে আরেকটু এগিয়ে যাবার দিন এই জন্মদিন।

তিনি কখনও কেক কাটেননি জন্মদিনে। এক বছর বয়সের সময় মা হামিদা মোর্ত্তজা ঘটা করে ছেলের জন্মদিন পালন করবেন বলে কেক নিয়ে আসেন। বাড়ি জুড়ে সাজসাজ রব, প্রথম সন্তানের প্রথম জন্মদিন। কিন্তু মুহূর্তেই সেটি মলিন হয়ে যায়।

নানা অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান ডেকে বলে দেন, যেন কেক না কাটে। মেয়েকে বুঝিয়ে দেন, এসব কেন করতে হবে না।

যে কথা সেই কাজ। কেক আর কাটা হয়নি। সেই কথাটা আজও মেনে চলেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। নিজের জন্মদিনে কেক না কাটলেও ছেলের আবদার রক্ষার চেষ্টা করেন ঠিকই।

চিত্রা দাপিয়ে বেড়ানো সেই কৌশিক আজ ৩৬ পেছনে ফেলে পা দিয়েছেন ৩৭ বছরে। এর মাঝে দেখেছেন কত উত্থান-পতন। এসবের অংশও যে তিনি।

২০০১ সালের ৮ নভেম্বর বাংলাদেশের ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মাশরাফি আজ দেশের সেরা অধিনায়ক হয়ে উঠেছেন সময়ের পরিক্রমায়। তার ছোঁয়ায় যে বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট সেটা তো অজানা নয় এদেশের মানুষের।

২০১৭ সালে আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসরে (চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনালে খেলে তারই নেতৃত্ব। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপেও তার নেতৃত্বে কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলে টাইগাররা। ২০১৬ ও ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালেও তার নেতৃত্বে খেলে লাল-সবুজের জার্সি ধারিরা।

শত বাধা বিপত্তি এসেছে এই কুড়ি বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে। কতবার যে চোটে পড়েছেন আবার সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন দেশের হয়ে লড়তে। ৭ বার তাকে যেতে হয়েছে অপারেশন টেবিলে ছুরি-কাচির নিচে। প্রতিবারই অপারেশনের পর ভেবেছেন, আমি কী আর খেলতে পারব?

তিনি খেলেছেন, ফিরেছেন পুরোদমে। চোটকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিবারই লাল-সবুজ জার্সিটার কলার উঁচিয়ে বল হাতে দৌড়েছেন দেশের হয়ে।

মাশরাফির বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন এসবের সাক্ষী। প্রতিবারই অপারেশনের পর দেখেছেন ছেলের অবর্ণনীয় কষ্টগুলো। মুখ চেপে কাঁদলেও ছেলেকে সাহস জুগিয়েছেন প্রত্যেকটা মুহূর্ত।

‘ওর যখন প্রথমবার অপারেশন হয় তখন আমি ওকে দেখতে যাই। কৌশিককে দেখে আমি  নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। এই বাচ্চা ছেলেটা কীভাবে এত কষ্ট সহ্য করছে! এমনটা প্রতিবারই হয়েছে। ও ভীষণ সাহসী একটা ছেলে। নইলে কী আর এভাবেও ফিরে আসা যায়?’

মা হামিদা মোর্ত্তজা বলেন, ‘ও শুধু আমার একার ছেলে না। ওর জন্য সবাই দোয়া করে, সবাই নিজের মনে করে বলেই আল্লাহ্‌ কৌশিককে এতদূর নিয়ে এসেছে।’

ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা এখনও পুরোপুরি শেষ করেননি। ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও ২০০৯ সালে অলিখিত বিদায় জানান টেস্ট ক্রিকেটকে। বাকি রেখেছেন শুধু একদিনের ক্রিকেট। দীর্ঘদিন এই ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব করে আসা মাশরাফী এ বছরই নেতৃত্ব ছাড়েন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে।

যদিও পুরোপুরি ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগেই জন্মস্থান নড়াইলের মানুষদের কল্যাণে সপে দিয়েছেন নিজেকে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে অংশ নেন নির্বাচনে।

এখানেও তিনি জয়ী। নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। ‘নড়াইল হবে প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ বাসস্থান’ স্লোগান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দিন-রাত।

বন্ধুদের চোখে মাশরাফী অধিনায়ক কী আর সংসদ সদস্য কী। নড়াইলের শখানেক বন্ধুরা অপেক্ষায় থাকেন কবে আসবে কৌশিক। প্রতিবারই নড়াইল যাবার পর যেন উৎসব লেগে যায়। আর ফেরাটা হয় মলিন মুখে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বন্ধু, ‘ও আমাদের কাছে ছোটবেলার সেই কৌশিকই রয়ে গেছে। ওর নড়াইলে আসাটা আমাদের কাছে উৎসবের। যাবার বেলাটায় যেন বুকটা খালি হয়ে গেল। জন্মদিনে ওর জন্য অনেক ভালোবাসা, শুভ কামনা।’

উপরে