ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ পণ্ড: সিদ্ধান্ত নেবে ফিফা
বিশ্বের অন্যতম বড় ফুটবল ম্যাচ। সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ও বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড় মুখোমুখি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের তিন পয়েন্টের লড়াই। সব মিলিয়ে আবহটা ছিল জমজমাট এক ফুটবল ম্যাচের।
মাঠে খুব বেশি দর্শক উপস্থিত থাকার অনুমতি না দিলেও বিশ্বজুড়ে প্রায় শতকোটি ভক্ত চোখ রাখেন টিভি পর্দায়। ম্যাচের বদলে তারা যা দেখলেন সেটাকে 'লঙ্কাকাণ্ড' বললে খুব একটা বাড়াবাড়ি হবে না।
ব্রাজিলের হেলথ রেগুলেটরি এজেন্সির (আনভিসা) চার প্রতিনিধি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ চলার সময়ই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। ও সাইডলাইন থেকে রেফারিকে ম্যাচ থামাতে বলেন।
তাদের উদ্দেশ্য, মাঠের বাইরে নিয়ে যাবেন আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড় এমিলিয়ানো মার্তিনেস, এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো ও জিওভানি লো সেলসোকে। আনভিসার দাবি মতে, এই চার তারকা তাদের জানাননি যে ব্রাজিলে আসার ১৪ দিন আগে তারা ইংল্যান্ডে ছিলেন।
ব্যাস! শুরু হয়ে গেল তুলকালাম। কিছুক্ষণ বাগ্বিতণ্ডা করার পর লিওনেল মেসি ও নেইমার দলবল নিয়ে ফিরে গেলেন ড্রেসিংরুমে। বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবল ম্যাচ পণ্ড হলো আট মিনিটের মাথায়।
প্রশ্ন হচ্ছে এই পুরো বিশৃঙ্খলায় দায় কার?
আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ক্লদিও তাপিয়া ম্যাচ শেষে পরিষ্কার ভাবেই বলেছেন, তাদের খেলোয়াড়রা কোনো আইন ভঙ্গ করেননি। ব্রাজিলের প্রতিটি কোভিড প্রটোকল মেনেই তারা দেশটিতে খেলতে গিয়েছেন।
এত বড় ম্যাচের জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষ তিনটি; আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ), ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ) ও দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন (কনমেবোল)।
এই তিন সংস্থার অনুমতি, পর্যালোচনা ও নিশ্চয়তার সাপেক্ষেই খেলোয়াড়রা নামেন মাঠে।
ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা তার নিজ নিজ দেশের বোর্ড ও কনমেবোলের নিয়ম ও শর্ত মেনেই প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামেন।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি উইং আনভিসার সঙ্গে কোভিড প্রটোকল নিয়ে পরিষ্কার কথা বলা ও শর্ত জেনে খেলোয়াড়দের জানানোর দায়িত্ব শুরুতে সিবিএফ, তারপর কনমেবোল ও এএফএর।
যদি ওই চার খেলোয়াড় ব্রাজিলে খেলার জন্য উপযুক্ত না হন, তাহলে সেটা সিবিএফ যাচাই করে জানাবেন কনমেবোলকে। কনমেবোল অবহিত করবে এএফএকে। এএফএ সিদ্ধান্ত নেবে তাদের কোন খেলোয়াড় মাঠে নামাবে কি নামাবে না।
গত রাতে সাও পাওলোর মাঠে যে দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে সেটাতে এখনও নিশ্চিত নয় গাফিলতি বা গলদ কোন পক্ষ থেকে হয়েছে, কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে সিবিএফ ও আনভিসার যোগাযোগের ব্যর্থতার ফসল এই ম্যাচ বানচাল হওয়া।
ব্রাজিলের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে সিবিএফের নিজ দেশের কোভিড প্রটোকল অতিথি দলকে জানানোর কথা এবং সেগুলো নিশ্চিতে আহ্বান জানানোর কথা।
কনমেবোল জানিয়েছে, এই ম্যাচের রিপোর্ট তারা পাঠাবে ফিফার কাছে। ফিফার কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। যেহেতু বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ফিফার প্রতিযোগিতা, তাই এ-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত ফিফাই নেবে।
এক বিবৃতিতে কনমেবোল জানায়, ‘রেফারি ও ম্যাচ কমিশনার ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে এই ম্যাচের রিপোর্ট জমা দেবেন। সেটা পর্যালোচনা করে ফিফা জানাবে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় বর্তমান নিয়ম অবলম্বন করা হবে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ফিফার একটি প্রতিযোগিতা। এ-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু ওই সংস্থার আছে।’