শিরোনাম
সব প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো শিশুর শরীরে ‘বার্ড ফ্লু’ শনাক্ত টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা সাকিবের প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে রাশিয়ার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ভারতীয় সেনা নিহত সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর গাজায় ১০০ ট্রাক ত্রাণ লুট করে নিল মুখোশ পরিহিতরা নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 18 May, 2018 17:17

ফেসবুককে পেছনে ফেলে দিয়েছে ‘টিকটোক’

ফেসবুককে পেছনে ফেলে দিয়েছে ‘টিকটোক’
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক :

আপনি কি টিকটোক অ্যাপের নাম শুনেছেন? এই অ্যাপটি ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক বা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মতো জনপ্রিয় অ্যাপকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ার জানিয়েছে, ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসে আইফোনে সবচেয়ে ডাউনলোড করা হয়েছে চীনের এই ভিডিও সেলফি ব্যবহারের অ্যাপটি।

চীনে এই অ্যাপটি ডাউয়িন বা কাঁপানো সংগীত নামে পরিচিত, যেটি এখন পর্যন্ত বিশ্বে ৪ কোটি ৪৮ লাখ বার নামানো হয়েছে।

এই অ্যাপের মূল ধারণা প্রকাশ করা হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। সেটি ছিল খুব সহজ, ব্যবহারকারীরা ১৫ সেকেন্ডের ছোট ছোট সংগীতসংবলিত ভিডিও তৈরি করতে পারবেন, যেখানে বেশ কিছু ইফেক্ট যোগ করা যাবে।

ধারণাটি নতুন কিছু নয়, কিন্তু টিকটোক যেন সেটার সঠিক ব্যবহারই করেছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিগুয়াং বলছে, চীনে মোট ব্যবহৃত স্মার্টফোনগুলোর অন্তত ১৪ শতাংশ ফোনে এ অ্যাপটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে এটি আইফোনে যত ভালোভাবে কাজ করে, অ্যান্ড্রয়েট ফোনগুলোয় ততটা ভালো কাজ পাওয়া যায় না। এর কারণ হতে পারে যে, মেইনল্যান্ড চীনে গুগলের ডিস্ট্রিবিউশন প্লাটফর্মগুলো কাজ করে না। কারণ চীনে গুগলের সেবাগুলো নিষিদ্ধ রয়েছে।

তবে টিকটোকের লক্ষ্য শুধু চীনে নয়। প্রতিবেশী আরও কয়েকটি দেশে অ্যাপটি ছড়িয়ে পড়ছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানও।

চীনের ২৪ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই এখন এ অ্যাপটি ব্যবহার করে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর তরুণদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টিকটোক। সেখানে ১৮-২৪ বছর বয়সীদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ তরুণ অ্যাপটি ব্যবহার করে।

এর কারণ হয়তো এটা যে, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন বা থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর মানুষ অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় সামাজিকমাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে। প্রতিদিন গড়ে অন্তত তিন ঘণ্টা।


‘লাইক অর্জন’
এই অ্যাপটি তৈরি করেছে বাইটড্যান্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান, যার প্রতিষ্ঠাতা ৩৪ বছরের উদ্যোক্তা যাহাং ইয়িমিং

তিনি আরও একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন, যেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ইন্টারনেটে পাঠকদের জন্য পড়ার উপযোগী জিনিসপত্র সুপারিশ করে।

২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৬০ কোটি গ্রাহক সেই অ্যাপটি ব্যবহার করছে।

বেইজিংয়ে গত বছর একটি সম্মেলনে টিকটোকের সফলতার বেশ কিছু গোপন তথ্য তুলে ধরেন যাহাং।

গ্রাহকদের ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রথমে অ্যাপ নির্মাণে জড়িত সবার জন্যই সেটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে দেন, যেখানে তারা নিজস্ব অ্যাকাউন্ট তৈরি করবে।

যাহাং ইয়িমিং জানান, ‘তাদের অবশ্যই একটি নির্দিষ্টসংখ্যক লাইক অর্জন করতে হবে, না হলে সেটি জোর করে করার মতো কোনো ব্যাপার হবে। একটি পণ্য তৈরির আগে আমাকে অবশ্যই গ্রাহকদের মনোভাব বুঝতে হবে এবং তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়টি জানতে হবে।’

গত কয়েক বছর ধরেই চীনে অনেক অ্যাপ স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সেন্সর টাওয়ারের হিসাবে, টেনসেন্ট আর আলিবাবা নামে চীনের দুটি কোম্পানি ২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা অ্যাপের তৃতীয় আর চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।


গেমস আর চ্যাট
টিনসেন্ট ২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক গেম প্রকাশক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। উইচ্যাটের পরেই তাদের অবস্থান।

দক্ষিণ চীনের মর্নিং পোস্টের হিসাবে, ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসে মার্কিন ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারের পরেই রয়েছেন টিনসেন্টের অবস্থান।

টেকনোলজি ওয়েবসাইট ডিজিটাল ট্রেন্ডসের সহযোগী সম্পাদক (মোবাইল) সিমন হিল বলছেন, ‘চীন এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ্যাপের বাজার। বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় সেখানকার মানুষ নানা অ্যাপের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করে। ফলে সেখানে চমৎকার কিছু আবিষ্কারও হয়েছে।’

‘যদি কোনো অ্যাপের এমন সব সুবিধা থাকে, মানুষের কাছে যার চাহিদা রয়েছে, তা হলে টিকটোকের মতো যে কোনো অ্যাপ খুব সহজেই সর্বত্র জনপ্রিয়তা পাবে।’

‘অ্যাপের বাজারটি সত্যিই বৈশ্বিক একটা বাজার। সুতরাং চীনের অ্যাপ বলে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে অ্যাপ মার্কেটের বড় প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো যখন এ রকম অ্যাপের খোঁজ পায়, তখন হয় কিনে নেয় অথবা নকল করে তার সুবিধাগুলো তারাও আয়ত্ত করে নেয়।’

টিকটোকের সঙ্গে এই উদ্যোগ নিয়েছে বাইটড্যান্স। গতবছর তারা ১ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে আমেরিকান ভিডিও প্লাটফর্ম মিউজিক্যাল ডট লিকে, যাদের অনেক সুবিধা ব্যবহার করবে এ চীনা কোম্পানি।

যতদূর বোঝা যাচ্ছে, এ অ্যাপটি চীনের অন্যসব কোম্পানির তুলনায় বাধাবিপত্তি কাটিয়ে উঠছে; বিশেষ করে চীনের সরকারের কড়া সেন্সরশিপের মতো সমস্যাও তারা পার করে ফেলেছে।

চীনের অন্য দুটি জনপ্রিয় ভিডিও প্লাটফর্ম-কাইশো আর হোউশান এ মাসের শুরুর দিকে অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে অভিযোগ তোলা হয়েছে- ‘তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক গর্ভধারণকে উৎসাহিত করছে।’

বাইটড্যান্সও এ ধরনের দমনপীড়নের মুখে পড়েছে। যখন এপ্রিলে কৌতুকের একটি অ্যাপ নেইহান ডুয়ানডি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে অভি যোগ ছিল, তারা ‘অশ্লীল বক্তব্য’ প্রচার করছে।

মৌলিক সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রচারণা না করায় যিহান একটি বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়েছেন এবং বলেছেন কোম্পানির ভেতর তারা সেলফ-সেন্সরশিপ আরও বাড়াবেন।

তবে শিশুদের টিভি অনুষ্ঠান পেপ্পা পিগের সঙ্গে জড়িত ৩০ হাজারের বোশি ভিডিও ক্লিপ টিকটোক নিষিদ্ধ করেছে বলে যে বক্তব্য এসেছে, তা অস্বীকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ মাসের শুরুর দিকে সংবাদ প্রকাশিত হয় যে, পেপ্পা পিগ কার্টুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ভিডিও ক্লিপগুলো সরিয়ে ফেলছে টিকটোক।

চীনের কোনো কোনো গণমাধ্যমে পেপ্পা পিগকে ‘ক্ষতিকারক’ বলে বর্ণনা করা হলেও কার্টুনটি চীনে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

উপরে