শিরোনাম
আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন বন্ধ ঘোষণা ডলার নিয়ে ভারত-চীন-রাশিয়াকে কড়া হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের গিনিতে ফুটবল ম্যাচে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নিহত ইউক্রেনকে জার্মানির ৬৮৫ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা ভারতে মসজিদে ‘সমীক্ষা’ চালানো ঘিরে সংঘর্ষ, নিহত ৩ সরকারের সমালোচনামূলক গান, ইরানি র‍্যাপারের মৃত্যুদণ্ড ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে যাদের জিমেইল টিকটক নিষিদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন হান কাং বিশ্বসেরার স্বীকৃতি পেল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর দ. কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি নিভে গেল বাতিঘর..... গুগল-অ্যাপলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড অ্যামাজন পড়াশোনা শেষে ব্রিটেনে থাকতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা
Update : 27 February, 2018 03:02

ঘুরে আসুন হিমালয়কন্যা নেপাল

ঘুরে আসুন হিমালয়কন্যা নেপাল
মেইল ট্রাভেল ডেস্ক :

হিমালয়ের দেশ নেপাল। বিশ্বের যে কোনো দেশের পর্যটকের জন্য এটা খুবই আকর্ষণীয় স্থান। পাহাড়-পর্বতে ঘেরা নেপালে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো আছে অনেক স্থান।

 

এভারেস্ট ছাড়াও এখানে আছে বেশকিছু পুরোনো মন্দির, জলপ্রপাত ইত্যাদি। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ায় কিছু বেশি সুবিধা পাওয়ার অধিকার তো আমাদের আছেই। কাছাকাছি হওয়াতে নেপালের পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য খুব কঠিন কিছু না। ভ্রমণ শুরু করার আগেই নেপালের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে কিছু জানা থাকলে খুব সহজে ঘুরে দেখতে পারবেন যা কিছু দর্শনীয়। তাই আগেই তৈরি করুন আপনার ভ্রমণ স্পটের তালিকা।

 

মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্প: পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার ইচ্ছে বা আগ্রহ না থাকলেও একবার ঘুরে আসতে পারেন মাউন্ট এভারেস্ট বেসক্যাম্প থেকে। এভারেস্ট জয়ের কিছুটা স্বাদ হয়তো পেয়ে যাবেন এখানে এসেই। বেসক্যাম্পটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৩৬৪ মিটার উঁচুতে।

 

ভক্তপুর: ভক্তপুর শহরের অবস্থান কাঠমান্ডু থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। শহরটি মধ্যযুগীয় শিল্প-সাহিত্য, কাঠের কারুকাজ, ধাতুর তৈরি মূর্তি ও আসবাবপত্রের জাদুঘর বলে পরিচিত। শহরটিতে বুদ্ধমন্দির ও হিন্দুমন্দিরের অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়। ৫৫টি জানালাসমৃদ্ধ রাজপ্রাসাদ ও তার অপূর্ব কারুকাজ নেপালের ঐতিহ্য বহন করে। প্রাচীন রাজাদের আবাসস্থল ছিল ভক্তপুর। বেশকিছু ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে এখানে। প্রাচীন কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রার ছোঁয়াও এখানে পাওয়া যায়। ভক্তপুরের দর্শনীয় স্থাপত্যের মধ্যে রয়েছেÑ পশ্চিম তামূধি তোলগেট, পটার্স স্কয়ার, পটার্স স্কয়ারের সিংহদ্বার, তামূধি তোল, নয়া তাপোলা মন্দির, ভৈরবনাথ মন্দির, তিল মহাদেব নারায়ণ মন্দির, দরবার স্কয়ার, এরোটিক এলিফ্যান্টস মন্দির, উগরাচান্দি এবং ভৈরব মূর্তি, রাজা ভূপতিন্দ্রমালার কলাম, ভৎসলা দুর্গামন্দির এবং তেলেজু ঘণ্টা, রাজভবন, ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি, সোনালি গেট, সিদ্ধিলক্ষ্মী মন্দির, ফাসিদেগা মন্দির, তাচুপাল তোল, দত্তনারায়ণ মন্দির, ভীমসেন মন্দির, তাচুপাল জাদুঘর ইত্যাদি।

 

নাগরকোট: কাঠমান্ডু থেকে ৩২ কিলোমিটার পূর্বে নাগরকোটের অবস্থান। ভক্তপুরের সবচেয়ে নৈসর্গিক স্থান এটি। যেখান থেকে হিমালয়ের জমকালো সূর্যোদয় দেখা যায়। পর্যটকরা কাঠমান্ডু থেকে গিয়ে নাগরকোটে রাত্রিযাপন করে সূর্যোদয় দেখার জন্য। বিশেষ করে বসন্তকালে দর্শনার্থীরা নাগরকোট ভ্রমণে যায়। এ সময় বিভিন্ন রকমের ফুলের সমারোহ ঘটে।

 

নাগরকোট গ্রামের বৈশিষ্ট্য হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থানে এটি অবস্থিত। পৃথিবীর অন্যান্য গ্রামে বসবাসকারী মানুষজন যেখানে মাঠ থেকে আকাশকে দেখে। সেখানে নাগরকোটের বাসিন্দারা নিচে তাকিয়ে আকাশ দেখে। ঠিক যেন স্বর্গের অপার সৌন্দর্য অনুভব করার মতো অবস্থা। এভারেস্ট ছাড়াও বেশ কয়েকটি চূড়া এখান থেকে দেখা যায়। এর মধ্যে লাংটাং, মানাসলু, গৌরীশংকর অন্যতম। কাঠমান্ডু থেকে নাগরকোট গাড়িতে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। উন্নতমানের কিছু হোটেল আছে নাগরকোটে। ক্লাব হিমালয়ানের কথা না বললেই নয়। ওদের প্রায় সবকটি রুম থেকেই হিমালয় দেখা যায়। নিজস্ব অবজারভেটরিও আছে। ব্যয় একটু বেশি। মাঝারি মানের হোটেল আর ব্যক্তিগত গেস্টহাউসও আছে এখানে। তবে পানির সমস্যা প্রকট। বড় হোটেলগুলোতে নিজস্ব পানি পরিবহন এবং উত্তোলনের ব্যবস্থা আছে।

 

পোখারা: নেপালের ছোট্ট পর্যটন শহর পোখারা। নেপালি ভাষায় পোখারা মানে পুকুর বা দিঘি। এখানে লেকও রয়েছে। আদিম বাতাস, জমকালো তুষারাবৃত সরু চূড়া, নির্মল লেক এবং শ্যামলিমাবেষ্টিত এটি যেন হিমালয়ের রতœ। এর তিনটি প্রধান লেক পেহুয়া, রূপা এবং বেগনাস। এটি ভারত এবং তিব্বতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা।

 

কাঠমান্ডু থেকে পোখারার সাত ঘণ্টার পথ। শুধু পথ নয়, নিসর্গের সঙ্গে আলাপ করতে করতে এগিয়ে চলা। আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু, খাঁড়া-ঢালু এক আশ্চর্য পথ। একদিকে উঁচু পাহাড় অন্যদিকে গিরিখাদ।

 

ফেউয়া লেকে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ তুলনাহীন। লেকের অন্য পাড়টি পাহাড়ঘেরা। পাহাড় বেয়ে নামছে জল। আর বিভিন্ন স্থানে স্থানে পিকনিক স্পট।

 

একটি মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সেতি নদী। এটা নদী না গিরিখাদÑ তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দুধসাদা জল। সেই সেতুর রেলিং থেকে নিচের দিকে তাকালে আতঙ্ক।

 

ডেভিস ফলস: একটি প্রাকৃতিক ঝরনা। আগে এর নাম ছিল প্যাটালি সাঙ্গো। ১৯৬১ সালের ৩১ জুলাই বিকেলের রোদে সুইস তরুণী ডেভিস তার স্বামীর সাথে গোসল করতে নামলে লেক থেকে হঠাৎ দ্রুত বেগে নেমে আসা পানির স্রোতে ভেসে যায় ডেভিস। অনেক দিন পর তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে জীবত নয়; তখন সে মৃত। পরবর্তীতে তার স্মৃতিতে এই ঝরনার নামকরণ হয় ডেভিস ফলস।

 

অন্নপূর্ণা: অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প ট্র্যাক অবশ্যই অন্নপূর্ণা অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। অন্নপূর্ণা ট্র্যাকিং সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্র্যাকিং। যারা ট্র্যাক করে তাদের জীবনে একবার হলেও এখানে যাওয়ার ইচ্ছে জাগবে। নেপালের অন্নপূর্ণা অঞ্চলের কেন্দ্রীয় উত্তরাংশে অবস্থিত স্থানের নামকরণ করা হয়েছে ‘হিমালয়ের গর্জন’।

 

বছরের যেকোনো সময় এখানে ট্র্যাক করা যায়। তবে অতিরিক্ত বরফের কারণে মাঝেমধ্যে শীতকালে ট্র্যাক বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে বসন্তকাল হচ্ছে ট্র্যাকিংয়ের উপযুক্ত সময়। অন্নপূর্ণার মূল পিক হচ্ছে গভীর হিমবাহ পরিহিত স্থান, যা অ্যাম্পিথিয়েটার নিয়ে প্রায় ১০ মাইল ব্যাস একটি বৃত্তে প্রায় অবিকল সাজানো। এটি অন্নপূর্ণা হিমালয়, হিয়ান চুলি, অন্নপূর্ণা দক্ষিণ, অন্নপূর্ণা ফ্যাঙ্গ, অন্নপূর্ণা-১, গঙ্গাপূর্ণা, অন্নপূর্ণা-৩, গন্ধরবা চুলি এবং মাছাপুছেরে নিয়ে গড়া।

 

কাঠমান্ডু: এটি নেপালের রাজধানী এবং বৃহৎ শহর। এখানে রয়েছে আশানটোল, সেতো মাখিন্দনাথ মন্দির, শিভা মন্দিরসহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন স্থান।

 

কাঠমান্ডু ভ্যালি: নেপালের তিনটি প্রাচীন নগরী নিয়ে গঠিত কাঠমান্ডু ভ্যালি। এর মধ্যে রয়েছে কাঠমান্ডু, পাটান এবং ভক্তপুর। কাঠমান্ডু ভ্যালিতে কয়েকশ অপরূপ সুন্দর স্মৃতিসৌধ, ভাস্কর্য, শৈল্পিক মন্দির এবং কুমারী মেরির স্মারক রয়েছে।

 

গোল্ডেন গেট: এটি নেপালের গর্ব। এটি মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় নিদর্শন। এই রাজকীয় দরজাটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।

 

রারা লেক: রারা জাতীয় উদ্যানবেষ্টিত এটি অপরূপ সুন্দর একটি লেক। নেপালের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এই লেকটি সমুদ্রপিষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৯৯০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।

 

তিলেচো লেক: এটি পৃথিবীর বৃহৎ লেকগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ লেকটি প্রায় ৫ হাজার মিটার বিস্তৃত। তবে এ এলাকায় পর্যটকদের জন্য থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই।

 

পুনহিল: অন্নাপূর্ণা পর্বত দেখার জন্য উন্মুক্ত স্থান হচ্ছে পুন হিল। পর্বত দেখার জন্য এই স্থানটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। ভুলেও এটি না দেখে নেপাল ত্যাগ করবেন না।

 

হিস্ট্রি মিউজিয়াম: কাঠমান্ডু শহর থেকে ভক্তপুর যাওয়ার পথেই রয়েছে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে নেপালের ১৪ হাজারেরও বেশি প্রাণি, পতঙ্গ ও পক্ষীকুল। প্রজাপতি, সরীসৃপ, মাছ, পাখি ও স্তন্যপায়ী নানা জীবজন্তু।

 

লুম্বিনি: লুম্বিনি নেপালের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। এখানে রয়েছে পুষ্করিণী, মায়াদেবীর প্রাচীন মূর্তি, বুদ্ধমন্দির, থাই মনেস্ট্রিসহ সবুজ ঘাসে ছাওয়া প্রান্তর। এখানে প্রতিদিনই বৌদ্ধধর্মের অনুসারীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বর্তমানে লুম্বিনিতে বিভিন্ন দেশের শিল্পকলা ও সংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরা হয়। এখানে ধর্মীয় অনুসারীদের থাকার জন্য মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে।

 

জানাকপুর: এটি সীতার জন্মস্থান। একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এখানে রয়েছে জানাকী মন্দির এবং ১১৫টি ঐতিহাসিক পুকুর। যার মধ্যে গঙ্গা সাগর, পরশুরাম কুন্দা এবং ডানুসা সাগরের উল্লেখ না করলেই নয়। এবার জেনে নেয়া যাক, কীভাবে যাবেন নেপালে? কখন যাবেন? কোথায় থাকবেন? নেপালে আপনার জন্য কী খাবারের ব্যবস্থা আছে? এসব জানা থাকলে অনেক সুবিধা পাবেন আপনি।

 

ভিসা প্রসেসিং: নেপালের টুরিস্ট ভিসা যে কোনো দেশের নেপালি দূতাবাস থেকেই পাওয়া যায়। যথাযথভাবে আবেদন করলে একদিনের মধ্যেই ভিসা মিলে। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফরম পূরণের মাধ্যমে ভিসা পাওয়া যায়। বাংলাদেশিরা নেপাল ভ্রমণের জন্য আগেই ভিসা সংগ্রহ না করলে ওই বিমানবন্দর থেকে ভিসা সংগ্রহ করার সুবিধা রয়েছে। এক্ষেত্রে অন অ্যারাইভাল ভিসার মাধ্যমে নেপালে পৌঁছার পর নেপালি বিমানবন্দর থেকে ভিসা নিতে হয়। গেট ফি বাংলাদেশিদের জন্য ১৫০ নেপালি রুপি।

 

আবাসিক হোটেল: নেপালের হোটেল ভাড়া এলাকা ও সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন রকম। কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে দেড় হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে প্রচুর হোটেল পাওয়া যায়।

 

নেপালের কিছু হোটেলের নাম ও ঠিকানা: ডাওয়ারিকা, বাট্টিস্পুটালি, কাঠমান্ডু। হোটেল র‌্যাডিসন, লাজিম্পাট, কাঠমান্ডু। হোটেল কোর্টিয়ার্ড, ৬৭/২৭, জেড স্ট্রিট, থামাল। হায়াট রিজেন্সি, তারাগাও, বুদ্ধা।

 

 

 

 

নিউইয়র্ক মেইল/নেপাল/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এইচএম

উপরে