বিশ্বের দশ বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান
আমাদের দৈনন্দিন ঝুট-ঝামেলা কাজকর্ম থেকে কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে আপনজনের সাথে একটু ঘুরে নেয়া বা বেড়িয়ে আসা দরকার যাতে করে মন ও স্বাস্থ্য দুটোকেই কিছুটা শান্তি ও বিশ্রাম দেয়া যায়। কিছুটা সময় নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য ব্যয় করে ঘুরে আসুন পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্থানগুলো, এটা আপনার মনের সব বিষাদ, দুশ্চিন্তা, খারাপ লাগা দূর করে ভুলিয়ে দেবে আপনার প্রতিদিনের জগত।
ভ্রমণ মানুষের জ্ঞান ভান্ডার বিকশিত করে। পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যার সৌন্দর্য্য, মোহনীয় দৃশ্য দেখে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। প্রতিবেদনটিতে সমগ্র বিশ্বের সেরা ১০ জায়গার সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরা হলো।
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, জিম্বাবুয়ে: এই অপরূপ সুন্দর ঝরণাটি অবস্থিত জিম্বাবুয়ের বর্ডার ও জিম্বাজি নদীর কোলঘেঁষে। যদিও এই জলপ্রপাতটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিংবা প্রশস্ত জলপ্রপাত নয় তবু এই উত্তেজনাপূর্ণ জলপ্রপাত ২ কিলোমিটার মাইল প্রায় দখল করে এবং ৩৫৪ ফুট উঁচু। প্রায় ২০ কিলমিটার দূর পর্যন্ত এটি রোমহর্ষক কুয়াশার সৃষ্টি করে যা কিনা ‘গুড়–ম ধোঁয়া’ নামে সেই অঞ্চলে পরিচিত। একজন স্কটিশ অনুসন্ধানকারীর নামের ব্যক্তি নামকরণ করেছেন। এই স্থানের পরিদর্শক আগে জিম্বাবুয়ের বেশি হতো, তবে আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিদর্শক এখানে বেড়াতে আসে। ট্রেন কিংবা বাস দিয়েও এই জলপ্রপাত দেখতে যাওয়া যায় এবং অনেক সস্তা।
ভেনিস, ইতালি: ভেনিস একটি উপহৃত। ইতালির এই উপহৃতটি এবং এটা শুধু আশ্চর্যজনকই নয় বরং সংরক্ষকও বটে। ভেনিস তার এই সৌন্দর্য্য ৬০০ বছর ধরে রেখেছে। এ শহরে প্রায় ১১৮টি দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে এবং অনেক অনেক পরিমাণে দর্শক এখানে ভিড় জমায় শুধু এর খ্যাতি ও অনেক সুন্দর জায়গার কারণে। শহরের সবচেয়ে প্রাচীনতম দেয়ালটি ৩২৫ ফিট উঁচু লম্বা ভিত্তি প্রস্তর। সাধারণত এটাতে লোকে লিফটের মাধ্যমের উঠে কিন্তু প্রাচীনকালে রোমান সম্রাট ৩য় ফ্রেডরিক ঘোড়ায় সওয়ার হতেন। সেন্ট মার্কের রাজপ্রাসাদ এবং সান মার্কো অন্যতম দুটি ভ্রমণ আকর্ষণ। সমালোচক এবং জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী হাজার আকর্ষণের যে একটি বিশ্বখ্যাত বিলাসিতা গন্তব্য তাহলো ভেনিসের দ্য লিডো দি ভেনেজিয়া।
ফেইরিপুলস, স্কটল্যান্ড: ফেইরি পুল যার বাংলা করলে দাঁড়ায় পরীপুল, এটি গ্লেন ভগুর সৈকত থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত। গ্লেন ব্রিটেল ফরেস্ট থেকে আসা ধোয়ার এরা একটি বড় অংশ যা খুব স্পষ্ট শান্ত স্ট্রিম এবং সুন্দর জলপ্রপাত প্রবাহ সৃষ্টি করে। মজার বিষয় হলো বরফ শীতল পানিতে আপনি সাতারের আনন্দ নিতে পারবেন। তবে এটি গ্রীষ্মকালেও বেশ ঠাণ্ডা থাকে। যাতায়াত ব্যবস্থা এতোটা ভালো না এখানে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টও তেমন একটা নেই তবে আপনি নির্মেঘ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পুল দিয়ে হেঁটে হেঁটে। যাইহোক, এই জায়গায় পর্বতারোহী, বন্যপ্রাণি বিষয়ক অধ্যয়নপ্রেমীদের এবং একটি ব্যস্ত জীবনযাপন করেন, যারা তাদের জন্য আনন্দদায়ক একা সময় কাটাতে বেশ উপযোগী।
গ্রেটব্লু-হোল: একটি বড় ডুবো সিঙ্কহোল, গ্রেট ব্লু-হোল বাতিঘর রিফ কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত। এটি একটি বিশেষ ডাইভিং গন্তব্য যার গভীরতা ৪০৭ ফিট এবং ৯৮৪ ফুট চওড়া। এবং পরিষ্কার পানি এবং সুন্দর সামুদ্রিক জীবন সমৃদ্ধ। আপনি যদি পানিতে ডাইভ করতে ভালোবাসেন, তাহলে আপনার জন্য এটাই আসল জায়গা। তার সৌন্দর্য্যরে কারণে গ্রেট বুø-হোল এখন বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার তালিকায় আছে। কারণ ২০১২ সালে ডিসকভারি চ্যানেলের এক রিসার্চে গ্রেট ব্লু-হোল পৃথিবীর ১০ সবচেয়ে আশ্চর্যজনক স্থানের তালিকায় শীর্ষস্থানে ছিল। এটি একটি সস্তা অভিজ্ঞতা না যদিও, এর জন্য ভালো মাপের খরচ করা প্রয়োজন।
দ্যরেডবিচ, চায়ন: একটি সমুদ্রসৈকতে কিছু সময় কাটানো অবিশ্বাস্যভাবে চিত্তাকর্ষক হতে পারে, কিন্তু তা যদি হয় একটি অসাধারণ সৈকত। তাহলে সেটা আরো স্মরণীয় ও বিস্ময়কর হবে। আর এটি হলো চায়নার রেড বিচ যা ডোয়াতে অবস্থিত পানজিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩০ কি.মি. এলাকাজুড়ে। এই বিচটি লাল কারণ এটার মাটি লাল নয়, বরং সুইডা নামক এক প্রকার শৈবাল পড়ার পর লাল রঙ ধারণ করে। লাল বিচ বৃহত্তম জলাভূমি যা সম্পূর্ণ বস্তুতন্ত্র সঠিকরূপে কাজ করে। এখানে প্রায় ৩৯৯টিরও বেশি বন্যপশু ও ২৬০ প্রজাতির পাখি আছে। লাল বিচে শুধু পতনের মৌসুমেই না বরং সারা পৃথিবী প্রতি বছর থেকে অনেক পর্যটক এসে থাকে। যে কেউ চাইলেই বাজেট ঠিক করে এখানে এসে বেড়িয়ে যেতে পারে।
ইনকাসভ্যতা, মাচুপিচু: এটি সাধারণত বিংহাম দ্বারা ১৯১৩ সালে আবিষ্কৃত হয়ে ইনকাদের হারানো শহর হিসেবে পরিচিত লাভ করে। ধ্বংসাবশেষ যা সাদা গ্রানাইট ব্লক তৈরি সুন্দর এবং সাবধানতার সাথে একসাথে লাগানো। এখানে অনেক সুন্দর মন্দির, বাসস্থান, পার্ক ও অভয়ারণ্য আছে। যদি আপনি ইতিহাসপ্রেমী হয়ে থাকেন তবে এই স্থানটি আপনার জন্য উপযুক্ত ইনকা সভ্যতার ইতিহাস ও ব্যাপারে পুরোটি আপনি জেনে নিতে পারবেন। বলা হয়ে থাকে একটি বিশেষ কারণে এই শহরে তৈরি হয়েছিল তবে আসল ঘটনা এখনো জানা যায়নি। মাচু পিচ্চু ভ্রমণ তাই সহজ ও আনন্দদায়ক, কিন্তু সময় ও শ্রমমূল্য ও ভালো হিসাবের টাকার দরকার হবে আপনার।
পোটালাপ্যালেস, তিব্বত: দালাই লামার বাসস্থান ও বিশ্বের উচ্চতম রাজপ্রাসাদ এটি। ৫০ বছর লেগেছে ৩৭০০ মিটার উঁচু ১৩ তলাবিশিষ্ট প্রাসাদটি তৈরি করতে। এ ছাড়াও এতে রয়েছে এক হাজার কক্ষ।
গ্রেটওয়াল, চীন: সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত চীনের এ মহাপ্রাচীরটি বিশ্বের মানবসৃষ্ট অন্যতম বড় নিদর্শন। এটি পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকে দেখা যায়। খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকে উত্তরের মঙ্গল আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য চীনের সম্রাটরা এটি নির্মাণ শুরু করে। ২২০-২০৬ খ্রিস্টপূর্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেয়ালগুলো নির্মাণ করা হয়। পূর্বে ডাংডং থকে শুরু করে পশ্চিমে লপ লেক পর্যন্ত ৮৮৫০ কিমি. দীর্ঘ এ দেয়ালটির বিস্তৃতি।
গ্রেটরিফটভ্যালি, ইথিওপিয়া: প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত এ এলাকাটি বিশ্বের বৃহত্তম ফাটলের ফলে সৃষ্ট উপত্যকা। রেড সি থেকে লেক মালাউয়ি পর্যন্ত বিস্তৃত এ এলাকাটি ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া।
তাজমহল, ভারত: ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে, যা সম্পন্ন হয়েছিল প্রায় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণের পর থেকেই তাজমহল বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে। বর্তমানে, তাজমহলে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন পর্যটক আসে যার মধ্যে ২ লাখ পর্যটক বিদেশি, যা ভারতের সবচেয়ে জনপিয় পর্যটনকেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে ঠাণ্ডা মৌসুমে অক্টোবর, নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে।
নিউইয়র্ক মেইল/ঢাকা অফিস/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এইচএম