কেন তিন ভাগ হয়ে যাচ্ছে সিডনি?
উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর সিডনি। আগামী ২০ বছরের মধ্যে শহরটিকে তিন ভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
গত মাসেই ‘গ্রেটার সিডনি রিজিওন প্ল্যান: আ মেট্রোপলিস অব থ্রি সিটিজ’ নামে এই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে গ্রেটার সিডনি কমিশন।
জনসংখ্যা, বাড়ির মূল্য এবং রাস্তার সংকোচন বৃদ্ধির কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কমিশন বলছে, এর ফলে বাড়ি, চাকরি ও যাতায়াতের সমস্যার সমাধান হবে।
আমরা সিডনিবাসীদের জীবনমান উন্নত করতে চাই, বলছিলেন কমিশনের একজন মুখপাত্র।
নতুন এই শহরের নামও ঠিক করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। সেগুলো হচ্ছে ইস্টার্ন হারবার সিটি, সেন্ট্রাল রিভার সিটি ও ওয়েস্টার্ন পার্কল্যান্ড সিটি।
তিন শহরের গল্প
আগামী ৪০ বছরের মধ্যে সিডনির জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হবে। ২০১৬ সালে সিডনির জনসংখ্যা ছিল ৪৮ লাখ, যা ২০৫৬ সালে হবে ৮০ লাখ। তবে শহরের বেশিরভাগ মানুষ ইস্টার্ন হারবার ডিসট্রিক্টে বসবাস করেন। কেননা সেখানে বন্ডি বিচ ও সিডনি অপেরা হাউজের মতো বিখ্যাত সব জায়গা ও স্থাপনা রয়েছে। তাই নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় জনসংখ্যার অনুপাত অনেক বেশি।
তবে একটি শহরকে তিনটিতে ভাগ করার মাধ্যমে শহরের ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
আর এই পরিকল্পনার মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে ‘৩০-মিনিটের শহর’ অর্থাৎ বাসিন্দারা নিকটবর্তী মেট্রোপলিটন সেন্টার থেকে আধঘণ্টার দূরত্বের বসবাস করতে পারবেন। আর এর জন্য নতুন নতুন পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হবে। যেমন গাড়ি ও ট্রেন চলাচলের নতুন রাস্তা।
এছাড়া নতুন ট্রান্সপোর্ট লিংকের মাধ্যমে তিনটি শহরই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ফলে ‘তিনটি ব্যতিক্রম কিন্তু সংযুক্ত শহরে’ পরিণত হবে সিডনি। যদিও এটি অতোটা সহজ হবে না।
যেমনটা বলছিলেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা সহযোগী অধ্যাপক গ্লেন সেরলে। তিনি বলেন, আমি মনে করি রেলপথ ও সড়ক পথে সময় বেশি লাগবে। কেননা ট্রেন চালু হওয়ার জন্য রেলপথে বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু এই পরিবর্তনটা প্রয়োজন বলে মনে করেন সিডনির অনেক বাসিন্দা। তাদেরই একজন আমাদো দৌমবিয়া। নিউ ইয়র্কের এই ব্যক্তি আট মাস আগে সিডনি আসেন। কিন্তু তার চোখও এড়ায়নি যে সিডনির কিছু এলাকা জনবহুল আর কিছু এলাকা জনশূন্য।
তবে নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের ব্যাপারে এখনও মুখ খোলেনি সরকার।
এখন কী অবস্থা সিডনির?
অধিকাংশ মানুষ এখন সিডনির ইস্টার্ন হারবার সিটিতে থাকতে চান। কারণ ওই এলাকায় সিডনি অপেরা হাউজের মতো বিখ্যাত স্থাপনা রয়েছে, বলছিলেন সহযোগী অধ্যাপক গ্লেন সেরলে।
তিনি বলছেন, জনবহুল এলাকায় ভিন্নতা দেখা যায়। আর পূর্বাঞ্চলীয় সিডনির আবহাওয়া পশ্চিমাঞ্চলীয় সিডনির চেয়ে ভালো। গ্রীষ্মের সময় পূর্বাঞ্চলীয় সিডনিতে সমুদ্রের বাতাস ভেসে আসে।
কিন্তু পূর্বাঞ্চলীয় সিডনিতে বাড়ির দাম বেশি। কেননা সেখানে চাকরি মোটামুটি সহজলভ্য ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সিডনিতে একটি বাড়ির গড় দাম নয় লাখ ১৪ হাজার ডলার। যেখানে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ির গড় দাম ছিল ছয় লাখ ৩০ হাজার ডলার।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ইস্টার্ন হারবার সিটিকে গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে উন্নয়ন যেন ওই শহর কেন্দ্রিক না হয় বরং বাকি দুই শহরে সমানভাবে উন্নয়ন হয় সেটিও নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে পুরো পরিকল্পনার সবচেয়ে চমকপ্রদ দিকটি হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চলীয় সিডনিকে একটি অ্যারোট্রোপলিস হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এটি এমন একটি নগর পরিকল্পনা যেখানে একটি বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে অবকাঠামো, অর্থনীতিসহ বাকি ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় সিডনিতে অপরাধের মাত্রাটা বেশি। কিন্তু ২০২৬ সালে ওয়েস্টার্ন সিডনি এয়ারপোর্ট চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন ২৮ হাজার চাকরি সৃষ্টি হবে। আর সিডনিকে ভাগ করে তিনটি শহরের পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে আট লাখ ১৭ হাজার লোকে কর্মসংস্থান হবে।