আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরও শরণার্থী নেবে জার্মানি
উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১০ হাজার শরণার্থীকে নেবে জার্মানি। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সবুজ সংকেত দিয়েছে বার্লিন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অভিবাসন কমিশনার দিমিত্রিস আভ্রামোপুলোস বৃহস্পতিবার দেশটির নতুন এ সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক স্তরে সংহতির প্রশ্নে আবারও এগিয়ে এসেছে জার্মানি৷ যেসব শরণার্থীর পুনর্বাসন প্রয়োজন, তাদের আইনসম্মত এবং সুশিক্ষিত পথে ঠাঁই দেয়া ইইউ প্রকল্পের লক্ষ্য৷ এর আওতায় ২০১৯ সালের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার উদ্বাস্তুকে অসুরক্ষিত স্থান থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জায়গা করে দেয়া হবে৷
জার্মানির পাশাপাশি অন্যান্য দেশও ৪০ হাজার শরণার্থীকে জায়গা করে দেবে৷ ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
শরণার্থীদের জন্য খরচ বাবদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন দেশকে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো অর্থসাহায্য দেবে৷ ২০১৫ সালে জার্মানিতে থাকার জন্য আবেদন করেছিলেন ১০ লাখ মানুষ৷ ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরিত্রিয়া থেকে৷ জানাচ্ছে জার্মানির অভিবাসন ও উদ্বাস্তু দফতর৷
ইউরোপীয় কমিশন এরই মধ্যে জার্মানির কাছে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন জানিয়েছে৷
দিমিত্রিস বলেন, আমাদের দ্রুত শেঙেনব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে৷ যদি শেঙেনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তা হলে সেটি হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৃত্যু৷
ইউরোপের শেঙেন দেশগুলোর মধ্যে বিনা ভিসায় সফরের সুবিধা রয়েছে৷ কিন্তু জার্মানি অস্ট্রিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে৷ সম্প্রতি জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানান, অস্ট্রিয়া সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ সেহোফারের দাবি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সীমান্তে ঠিকঠাক নজর রাখা হয় না৷ বৃহস্পতিবারও দিমিত্রিসের সঙ্গে সেহোফারের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে৷
এদিকে জার্মানি উদারতা দেখালেও অস্ট্রিয়া শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে৷ বুধবার অস্ট্রিয়া সরকার একটি বিল এনেছে, যাতে বেআইনিভাবে অস্ট্রিয়ায় বাস করা শরণার্থীদের দেশে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে৷ এমনকি প্রয়োজনে শরণার্থীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করার সংস্থান রাখা হয়েছে নতুন বিলে৷
উল্লেখ্য, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুৎর্সের রক্ষণশীল দল ও তাদের জোটসঙ্গী অতি দক্ষিণপন্থী ফ্রিডম পার্টি বেআইনি অভিবাসন রোখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল৷
অনেক শরণার্থী এসেছে জার্মানিতে৷ অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশ শরণার্থী নিতে নারাজ৷ এ অবস্থায় ইইউর সব সদস্য দেশকে কোটা অনুযায়ী শরণার্থী নিতে হবে– এমন দাবি জানিয়েছিল জার্মানি৷ মঙ্গলবারের বৈঠকে দাবি পূরণ হয়েছে৷
সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে দেয়া হবে৷ জার্মানি নেবে ৩১ হাজার ৪৪৩ জন৷ বছর শেষে জার্মানিতে আগত মোট শরণার্থী ৮ লাখে হয়ে যেতে পারে৷
নতুন বিলটি পার্লামেন্টে পাস হলে শরণার্থী হওয়ার খরচ বাবদ ৮৪০ ইউরো দিতে হবে আবেদনকারীকে৷ দেখা হবে তার কোনো অপরাধের রেকর্ড আছে কিনা৷ যদি তিনি ইউরোপের অন্য কোনো দেশে প্রথম এসে থাকেন, তাকে সেই দেশেই পাঠিয়ে দেবে অস্ট্রিয়া৷
দেশটির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী হার্বাট কিকল জানান, তারা যতটা সম্ভব কঠোর শরণার্থী নীতি তৈরি করছেন৷ ২০১৫ সালে দেড় লাখ আবেদন আসে অস্ট্রিয়ার কাছে, যা ৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশের জনসমষ্টির ১ দশমিক ৭ শতাংশ৷
শরণার্থীরা অপরাধ করলে দ্রুত তাদের অস্ট্রিয়া থেকে বহিষ্কার করা নতুন বিলের গুরুত্বপূর্ণ দিক৷ অপরাধী নাবালক হলেও ছাড় পাবে না৷ শরণার্থীরা ছয় বছর অস্ট্রিয়ায় থাকলে নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতেন৷ তা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হচ্ছে৷ ২০১৬ থেকে শরণার্থীর সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে অস্ট্রিয়া৷ ২০১৮ সালে মাত্র ৩০ হাজার শরণার্থীকে জায়গা দেয়া হবে সে দেশে৷