জেরুজালেমে আজান নিষিদ্ধ করেছে ইসরায়েল
তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরুর পর সেখানে আজান দেয়া নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইল।
সোমবার জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলি দূতাবাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সময় এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খবর ইয়ানি সাফাক।
দূতাবাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বহু ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। ওইসব ব্যানারে 'ট্রাম্প মেক ইসরাইল গ্রেট' এবং 'ট্রাম্প ইজ এ ফ্রেন্ড অব জিওন' স্লোগান লেখা ছিল।
ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৫২ নিহত:
মার্কিন দূতাবাসের স্থানান্তরের ঘটনায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনির প্রতিবাদ বিক্ষোভে হানাদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন ২৪০০ ফিলিস্তিনি।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এতে লাখো ফিলিস্তিনির প্রতিবাদে অগ্নিরূপ ধারণ করেছে ফিলিস্তিন। ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে জড়ো হয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ ও শিশুরা বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় শুরু হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভানকা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তারা।
গত ছয় সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় নিজ ভূখণ্ড ইসরায়েলি বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধারে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ শিরোনামে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে গাজার ক্ষমতাসীন ইসলামী দল হামাস। ইসরায়েল বলছে, সোমবারের ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি সীমান্ত বেড়া ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে।
হামাস নেতৃত্বাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সোমবারের সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি শিশুরাও রয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ও আগুনের কুণ্ডলী নিক্ষেপ করছে ফিলিস্তিনিরা। জবাবে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী স্নাইপারের গুলি, টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করছে। বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করায় গাজা ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে।
নিরাপত্তা বেড়ার পাশে অন্তত ফিলিস্তিনের ৩৫ হাজার দাঙ্গাকারী সহিংস হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তেলআবিব বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী আইনি প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি মেনে তাদের দমনের চেষ্টা করছে।
মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর ও ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে পুরো সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। সীমান্ত বেড়া পেরিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন তারা।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক বছর এই দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ‘বিপর্যয়’ বা ‘নাকাবা’ দিবস হিসেবে পালন করে। ওই বছর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হয়।
একই সঙ্গে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধেও সোমবার প্রতিবাদ করছেন ফিলিস্তিনিরা। গত ৬ ডিসেম্বরে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অত্যন্ত সুরক্ষিত সীমানা বেড়া পেড়িয়ে ইসরায়েলে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে গাজায় লাখো ফিলিস্তিনি পৌঁছেছেন।
তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ ও হেবরনেও বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা। জেরুজালেম থেকে উত্তরাঞ্চলের রামাল্লাহকে বিভক্তকারী কালানদিয়া সামরিক তল্লাশি চৌকির কাছেও বিক্ষোভ করছেন তারা।
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিক্ষোভ করে আসছে। ১৫ মে এই বিক্ষোভ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই এই সহিংসতার ঘটনা ঘটালো ইসরাইল ও মার্কিনিরা।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্ত্যুচুত হয়। ইসরায়েলি অবৈধ ভূমি দখলকে ফিলিস্তিনিরা বিপর্যয় হিসেবে মনে করে।
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিজ ভূখণ্ড ফেরতের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে ইসরায়েল বলছে, তাদের উচিত গাজা এবং পশ্চিম উপত্যকায় ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।