বিশ্বকে বশে আনতে ভোল পাল্টাচ্ছে মিয়ানমার
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের রিপোর্ট ও মিয়ানমার সেনাপ্রধানের ফেসবুক পেজসহ বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট বন্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা গণহত্যায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের ক্ষোভ প্রকাশ ও দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বানে অনেকটা নরম সুরে কথা বলছে মিয়ানমারের বৌদ্ধরা। রিপোর্ট প্রকাশের পর হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে তারা।
হঠাৎ জাতিসংঘের হুংকার রাতারাতি রোহিঙ্গা-দরদী হয়ে উঠেছে বৌদ্ধরা।
বছরের পর বছর রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন করে আসছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ অধিবাসীরা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এবং এরপর ২০১৭ সালের আগস্টে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেনাবাহিনী। আর সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু দেশটির সর্বস্তরের জনগণ।
সেনাদের সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া, রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ, শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে-জবাই করে হত্যা করেছে তারা। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের অপব্যবহার করেছে। তাদের এই নিপীড়নের জাঁতাকল থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা।
গত বছরের আগস্টে সেই রোহিঙ্গা নিধন অভিযানের এক বছর পর গত সোমবার প্রথমবারের মতো এটাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে জাতিসংঘের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এর জন্য দায়ী মিয়ারমার সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ সেনাবাহিনীর শীর্ষ ছয় জেনারেলকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারের অনুমোদন করে তদন্তকারীরা।
একই সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজনের ফেসবুক পেজ বন্ধ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘ রিপোর্ট প্রকাশের নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব। এখন মিয়ানমার জেনারেলদের বিচারের পথেই এগোচ্ছে। বিশ্বের ক্ষোভের মুখে রোহিঙ্গাদের প্রতি হঠাৎ দরদী হয়ে উঠেছে দেশটির বৌদ্ধরা। শুক্রবার এএফপিকে দেয়া দেশটির কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকারে দেশটির সামষ্টিক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ইয়াঙ্গুনে একটি চায়ের দোকানে ৪৭ বছর বয়সী কিয়ো কিয়ো বলেন, সেনাবাহিনী নয়, এখনও সুচিই আমাদের নেত্রী। তার নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্রের জন্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আমার মায়া হয়। আমরা সন্ত্রাস পছন্দ করি না। তাই তাদের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা লড়তেও চাই না। আমরা সেনাবাহিনীর রাখাইন কাণ্ডও সমর্থন করি না।