মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট সোলিহ
মালদ্বীপের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ শেষ পর্যন্ত কারাগার ও নির্বাসনকে এড়িয়ে মূল বিরোধী নেতা হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও নানা মতাদর্শের রাজনীতিবিদদের নিয়ে একটি জোট গঠনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে, যা সত্যিই একটি কঠিন কাজ হবে তার জন্য।
ভারতের দক্ষিণের শেষ প্রান্তে দক্ষিণ-পূর্বের ৩২৫ মাইলের প্রবাল প্রাচীরের উপহ্রদ ও সারি সারি পামগাছে ভরা দ্বীপটি স্বচ্ছ পানি ও নজরকাড়া অবকাশকেন্দ্রের জন্য বিখ্যাত।
কিন্তু পাঁচ লাখেরও কম জনসংখ্যার মুসলিম দেশটিতে ২০০৮ সালে তিন দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ইতি ঘটার পর গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে এক অস্থিতিশীল সময় পার করেছে।
নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন সৌদি আরব ও বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। নিজের সৎভাই মামুন আব্দুল গাইয়ুমসহ যে কেউ তার শাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ালে তার জায়গা হয়েছে সরাসরি কারাগারে।
এসব সত্ত্বেও সংস্কারপন্থী বলে খ্যাত মোহাম্মদ সোলিহ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
আগামী ১৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। তাকে এখন সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী মামুন আব্দুল গাইয়ুম ও মোহাম্মদ নাশিদকে একটি জোটের ভেতর ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে।
এ ছাড়া ধনকুবের ব্যবসায়ী কাসেম ইব্রাহিমের জুমহুরি দল ও ইসলামপন্থী আদহালাদ জোটেরও অংশ তিনি। ইসলামপন্থী এজেন্ডা নিয়েই তারা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। ২০১৩ সালে গাইয়ুমের পতনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা।
ভারতীয় থিংকট্যাংক দি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক এন সাথিয়া মরথি বলেন, নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর নিশ্চিত করতে হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বহুদলীয় একটি মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। এটিই তার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছা নির্বাসিত মোহাম্মদ নাশিদ ও ইব্রাহিমকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে তাকে।
বিরোধী দল মালদিভিয়ান গণতান্ত্রিক পার্টি সোলিহকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। দেশটিতে তিনি ইবু নামেই বেশি পরিচিত। বর্তমানে শ্রীলংকায় নির্বাসনে থাকা মোহাম্মদ নাশিদকে নির্বাচন কমিশন অযোগ্য ঘোষণার পরই তিনি প্রার্থী হন।
দেশটিতে বর্তমানে বহু বিরোধীদলীয় নেতা কারাগারে আটক রয়েছেন। যার মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট গাইয়ুম, একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীও আছেন।
তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা কুড়িয়েছিল।
সোলিহ বিরোধী দল থেকেই প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৯৪ সালে পিপলস মজলিশ দল তাকে মনোনয়ন দেয়। তখন থেকে তিনি বিরোধী দলেই আছেন। তবে এর মধ্যে পুলিশের বিদ্রোহের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া প্রেসিডেন্ট নাশিদের দুই বছর মেয়াদ বাদ যাবে।
সাবেক এক প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সোলিহ নিজের চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন। ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ পর্যন্ত মালদ্বীপের রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনে তিনি মূল ভূমিকা পালন করেন। ওই আন্দোলনের ফলেই দেশটিতে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়েছিল।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এ দ্বীপপুঞ্জকে ৩০ বছর শাসন করা গাইয়ুমের অধীন বিশেষ সংসদীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এ কমিটিই একটি নতুন আধুনিক সংবিধান প্রণয়ন করেছিল। ২০১১ সাল থেকে তিনি বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে নাশিদ গ্রেফতার হওয়ার পর বিক্ষোভের সময় সোলিহ মালদ্বীপ গণতান্ত্রিক পার্টির নেতৃত্ব দেন। নাশিদের বিরুদ্ধে মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দেন পশ্চিমা ও ভারতঘনিষ্ঠ এ রাজনীতিবিদ।
সোলিহকে শান্ত ও স্থির স্বভাবের বলে মন্তব্য করেন তার বন্ধুরা। দেশটিতে গণতান্ত্রিক উত্তোরণ ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় তিনি সফল হবেন বলেই সবার ধারণা।
কারাগারে আটক সব রাজনীতিবিদকে মুক্ত করে দেয়ার অভিপ্রায় ইতিমধ্যে তিনি ব্যক্ত করেছেন।
মালদ্বীপের সর্বোচ্চ স্বার্থ নেই এমন চুক্তিগুলো বাতিল কিংবা পর্যালোচনার কথাও জানিয়েছেন দেশটির এ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচনী প্রচারে ভারতের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে চীনের সঙ্গে তার টানাপড়েন তৈরি হওয়ারই আশঙ্কা বেশি বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।