সেনা পাহারায় জুমা পড়লেন শ্রীলংকার মুসলমানরা
শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর বাতাসে যখন আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল, তখন কোলাহলহীন রাস্তা দিয়ে মসজিদে গিয়ে জড়ো হন শত শত মুসল্লি। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা এমন দৃশ্য দেখেন, যেটা সচরাচর ঘটে না। অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে সেনা বাহিনীর জওয়ানরা পাহারা দিচ্ছেন মুসলমানদের এবাদতখানা।
ইস্টার সানডেতে একযোগে হামলার পর দেশটির রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিতে মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজার সেনা। তারা সন্দেহভাজনদের তল্লাশি ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।
রোববারে আকস্মিক হামলায় ২৫৩ জনের বেশি নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশ দেশটির সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোক।
লংকানরা গত এক দশক ধরে শান্তিপূর্ণভাবেই বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু হামলার পর প্রতিশোধমূলক সহিংসতার আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে মুসলমানদের। গাড়ি বোমা হামলার সতর্কতা জারি করে ইতিমধ্যে মুসলমানদের মসজিদে না যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু শহরের নিভৃত অংশেই কল্লপিটিয়া জুমা মসজিদটি। সরকার সবাইকে ঘরে বসে নামাজ আদায় করতে বললেও শত শত মুসল্লি শুক্রবার নির্ভয়ে গিয়ে মসজিদে জমায়েত হন। তারা জামায়াতে নামাজ আদায় করেন। এরপর দেশের সব ধর্মের মানুষের শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন।
২৮ বছর বয়সী বিক্রয়কর্মী রইস উল্লাহ বলেন, এটা সত্যিই দুঃজনক পরিস্থিতি। সেনাবাহিনী নামাজিদের তাড়াহুড়া করে সব সারতে বলছিলেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খানাখন্দকে ভরা রাস্তায় স্নাইপার কুকুর তাদের পথ অনুসরণ করেন।
রইস বলেন, আমি খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দুদের সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু কয়েকজন লোক যে কাণ্ড ঘটাল, তা আমাদের সবার জন্য হুমকি।
বছর দশেক আগে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর শ্রীলংকায় তুলনামূলক শান্তপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছিল। খ্রিষ্টান ও মুসলমানরা পাশাপাশি সৌহার্দ্য নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান ধর্মীয় উত্তেজনা থেকে তারা বেশ দূরত্বেই ছিলেন।
জুমা শেষে বের হয়ে আসছিলেন আবদুল ওয়াহেদ মোহাম্মদ। পেশায় এই প্রকৌশলী বলেন, সব মুসলমানরাই সন্ত্রাসী না। প্রতিদিন যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটে, তা থেকে রেহাই পেতে পরিবারসহ আমি আল্লাহ কাছে পানাহ চাই।