রোহিঙ্গাদের সুরক্ষাসহ মিয়ানমারকে চার আদেশ আইসিজের
রোহিঙ্গা গণহত্যার ওপর গাম্বিয়ার করা মামলায় মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করে দিয়ে দেশটিকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়াসহ চারটি আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত-আইসিজে।
গাম্বিয়ার করা মামলায় নেদারল্যান্ডের দ্য হেগের পিস প্যালেসে বৃহস্পাতিবার এই অন্তর্বর্তী আদেশ দেন আইসিজের প্রধান বিচারপতি বিচারপতি আবদুল কোয়াই আহমেদ ইউসুফ। এসময় অপর ১৪ জন স্থায়ী বিচারপতি ও দুজন অ্যাডহক বিচারপতি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
অন্তবর্তী চারটি আদেশে বলা হয়েছে- জাতিসংঘ কনভেনশন অনুযায়ী মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে হবে; গণহত্যার প্রমাণ ধ্বংস করা যাবে না; সশস্ত্র বাহিনী পুনরায় কোনো গণহত্যা ঘটাতে পারবে না এবং প্রতি চার মাস পরপর মিয়ানমারকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হয়।
আদেশের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ নিরসনে এটি একটি ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সুরক্ষায় বিশ্বকে এখন এগিয়ে আসতে হবে। তবে আদেশের পরে আদালতে উপস্থিত মিয়ানমারের প্রতিনিধি এবং আইনজীবীরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি জাতিসংঘের জেনেভা দপ্তরের স্থায়ী প্রতিনিধি এই আদেশকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। দ্য হেগে সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল আজিজ আবুহামেদ মামলার রায়কে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় একটি বড় অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে আদালতে উপস্থিত রোহিঙ্গা প্রতিনিধি তুন খিন এই রায়কে একটি মাইলফলক বলে বর্ণনা করেছেন।
আদালত বলেছে, গাম্বিয়া স্বনামে এই আবেদন করেছে। এরপর তারা ওআইসিসহ যেকোনো সংস্থা ও দেশের সহযোগিতা চাইতে পারে। তাতে মামলা করার অধিকার ক্ষুন্ন হয় না। জাতিসংঘ তথ্য অনুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনে যেসব বিবরণ উঠে এসেছে তার আলোকে গাম্বিয়া মিয়ানমারকে যে নোট ভারবাল দিয়েছিল তা বিরোধের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
আদালত বলেন, আইসিজের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আদালত গণহত্যা সনদের ধারা ৪১ এর আওতায় তিনটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশের শর্তসমূহ বিরাজ করছে বলে আদালত উল্লেখ করেছে। গাম্বিয়া যেসব অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার আদেশ চেয়েছে সেগুলোর প্রথম তিনটির লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দেওয়া। জাতিসংঘ তথ্যানুসন্ধান দলের উপসংহার, যা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে তাতে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় গণহত্যার উদ্দেশ্যে ছিল বলে যে উল্লেখ রয়েছে তা আদালতের নজরে এসেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া ইসলামি সহযোগী সংস্থা (ওআইসি) সহায়তায় মামলাটি করেছিল। গত বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর হেগে মামলার শুনানিতে নিজ দেশের হয়ে লড়েছিলেন মিয়ানমারের বিতর্কিত নেত্রী অং সান সু চি। অন্যদিকে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর কাঠামোবদ্ধ যে সহিংসতা ও বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে মিয়ানমার। তবে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে মামলাটি খারিজের আবেদন করেছিল মিয়ানমার।
আদালত মনে করেন, গণহত্যা সনদের ধারা ২ এর আলোকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটি বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী (প্রোটেক্টেড) গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচ্য। সনদের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর আওতায় (ধারা ৮ ও ৯) এই মামলা দায়েরের গাম্বিয়ার প্রাইমা ফেসি অধিকার আছে বলে জানিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার নেই বলে মিয়ানমার যে দাবি করেছে আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।