দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস
দিন যত যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াতে করোনাভাইরাসের ভয়বহতার রূপ ততই বড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রেক্ষাপট মনে হচ্ছে চীনের পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কোরিয়ায় একদিনেই সংক্রমণ মানুষের সংখ্যা ৫০৫ জন। যা করোনাভাইরাস সংক্রমণের রের্কড।
এ নিয়ে মোট আক্রান্তে সংখ্যা ১৭৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৩ জন। সর্বশেষ যিনি মারা গেছেন তিনি যিগুর গোপনীয় সিনচাঁইজি চার্চের সদস্য ছিলেন। ৭৪ বছর বয়সী একজন পুরুষ। ২০ ফেব্রুয়ারি তার জ্বর এবং কাশি ছিল। তার কয়েকদিন পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই বেশি ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহর থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে কোরিয়ার বিভিন্ন শহরে। যা ক্রমেই পরিস্থিতি প্রতিকূলের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে এটি এখন মহামারিতে রূপ নিতে যাচ্ছে। সংক্রমণ মানুষের মধ্যে দেগুতে ৬৪৮ জন, সিউলে ৪৩৩ জন, দেজন ২৭৩, বুসান ২৭২ জন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়। যার সমাধান স্বরুপ এখনো কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দেগু ও চোংদো সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের মধ্যেই এতদিন সংক্রমণের ঘটনা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন অন্যান্য অঞ্চলেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
নতুন করোনাভাইরাসে দেগু গির্জার অনুসারীরাই সবচেয়ে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এ গির্জার দুই লাখেরও বেশি সদস্যের ভাইরাস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দেগু থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ক্যাম্প ক্যারোলে ২৩ বছর বয়সী এক সৈন্য নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ সৈন্য সম্প্রতি দায়েগুর ক্যাম্প ওয়াকারে গিয়েছিলেন।
এর আগে মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটির কাছে বেশ কয়েকজন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্ত ওই সৈন্য ঘাঁটির বাইরে নিজের বাড়িতে নিজেকে স্বেচ্ছা-কোয়ারেন্টিন করেছেন বলে কোরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনী ইউএসএফকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
গত রবিবার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে টেলিভিশনের জাতির উদ্দেশে ভাষণও দেন। সেখানে এ পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভাষণে তিনি দেশের মানুষকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ যেকোনো বড় আকারের সমবেত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, সরকার মনে করে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যদি কোথাও ফেস মাস্ক মজুত করে রাখা হয় এবং সদ্য নিষিদ্ধ কোনো সমাবেশে কেউ অংশ নিলে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস খুব সহেজেই গোটা বিশ্বে একতালে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮১ হাজারের কাছাকাছি। মৃত্যুপরী এ ভাইরাস ইতোমধ্যে মৃত্যু ঘটিয়েছে ২ হাজার ৭৬৪ জনের, যাদের মধ্যে চীনেই মারা গেছে ২ হাজার ৭১৫ জন।
বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার প্রধান সাংবাদিক বলেছিলেন, চীনের মতো উচ্চবিত্ত দেশ যেভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করছে, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলির পক্ষে তা সম্ভব নয়। ফলে সংক্রমণ চীনের বাইরে চলে গেলে ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। সে আশঙ্কা ক্রমশ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত এখন পর্যন্ত এ রোগে কোনো বংলাদেশি আক্রান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। তিনি বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার নির্দেশ নিয়েছেন।