চীন করোনা মহামারি হওয়ার পর ৬ দিন তথ্য গোপন রেখেছিল
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে কতটুকু সময় লাগে? আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা মাত্রই যদি এটি সংক্রমণ ঘটায় সেই হিসেবে হয়তো তা কয়েক সেকেন্ড হবে। অথচ করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার তথ্যটি চীনা কর্মকর্তারা এক কিংবা দুদিন নয় বরং ছয় দিন গোপন করে রেখেছিলেন।
জানা গেছে, তথ্য গোপন রাখার সময়ের মধ্যেই চন্দ্রবর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ চীনে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে ফিরতে শুরু করেছিল। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে উহানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে করোনাভাইরাস।
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার সপ্তম দিন ২০ জানুয়ারিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জনসাধারণকে করোনভাইরাস সম্পর্কে প্রথম সতর্ক করেন। ততদিনে তিন হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে ভাইরাস।
১৪ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনার তথ্য গোপন রাখাটা চীনের কর্মকর্তাদেরই প্রথম ভুল ছিল না। বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা করোনা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে সপ্তাহ এমনকি মাস পর্যন্ত বিলম্ব করেছেন। তবে প্রথম দেশ হিসেবে চীন এই সতর্কবার্তা সময় মতো দিলে হয়তো আরও মৃত্যু কিংবা আক্রান্ত ঠেকানো যেত।
লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. জুয়ো-ফেং ঝ্যাং বলেন, ‘তারা (চীন) যদি ছয় দিন আগে পদক্ষেপ নিতো, তাহলে হয়তো আরো কম রোগী হতো, মেডিকেল সরঞ্জাম পর্যাপ্ত হতো।’
নথির বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের দুই সপ্তাহ পর বেইজিংয়ে শীর্ষ নেতারা পদক্ষেপ নিতে আরও ছয় দিন দেরি করেন। এ কারণে ওই সময়ে দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল করোনায় আক্রান্ত নতুন কোনো রোগীর নাম তালিকাভুক্ত করেনি। ৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কেবল উহান নয়, চীনের অন্যান্য শহরের হাসপাতালগুলোতে শত শত রোগী আসতে শুরু করে।
বিশ্লেষকদের মতে, এর জন্য তথ্য সরবরাহের ওপর চীনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ, আমলাতান্ত্রিক বাধা ও শীর্ষনেতাদের কাছে খারাপ সংবাদ পাঠানোর অনীহা দায়ী।
চীন অবশ্য তথ্য গোপন রাখার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বেইজিংয়ের দাবি, করোনার প্রাদুর্ভাবের পরপর তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিষয়টি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, ‘চীনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন কিংবা স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’