চলতি বছরেও মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ
কেবল ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযানেই নয়, এ বছরও আরাকান আর্মির বিরূদ্ধে সংঘাতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ও ‘যুদ্ধাপরাধ’ করেছে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের প্রধান মিশেল ব্যাশেলেত মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে তার প্রতিবেদনে ওই আশঙ্কার কথা জানান। সোমবার এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
জানা গেছে, মিশেল ব্যাশেলেতের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি এবং স্বাধীন সত্যানুসন্ধানী মিশন ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংঘাগুলোর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে রাখাইন ও চীন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরূদ্ধে এ বছর মিয়ানমার বাহিনীর সংঘাতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসহ অন্যান্য আইনের গুরুতর লংঘনের অভিযোগ দ্রুত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া দোষীদের স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতেও জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
রাখাইন ও দেশের অন্যান্য রাজ্যে যে যৌন সহিংসতা হয়েছে তা স্বীকার করতে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া ওই সহিংসতার হোতাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এবং সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও মানসিক সেবা নিশ্চিত করতেও মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদিকে, মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণের জন্য গঠিত ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমারের (আইআইএমএম)’ প্রধান নিকোলাস কোমজিয়ানও গতকাল সোমবার জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে বলেছেন, ‘আমরা মিয়ানমারে চলমান ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা যে ধরনের সহিংসতার খবর পাচ্ছি তা মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধপরাধ হতে পারে।’
মিয়ানমারে গুরুতর অপরাধ সংঘটনকারীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি (মিয়ানমারে যা হচ্ছে) এবং ওই সহিংসতাকারীদের জানা উচিত যে প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’
মানবাধিকার পরিষদকে আইআইএমএম প্রধান বলেন, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরূদ্ধে গাম্বিয়ার চলমান মামলার জন্য যথার্থ তথ্য সরবরাহ করছে আইআইএমএম। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আইআইএমএমের আলোচনা হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মিয়ানমার বাহিনী ও তার দোসরদের অপরাধের আলামত সংরক্ষণ করছে এবং সেগুলো আইআইএমএমকে দেওয়া শুরু করেছে।
নিকোলাস কোমজিয়ান গত নভেম্বর মাসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপচারিতার কথা তুলে ধরে বলেন, তাদের পরিবারগুলো সহিংসতার শিকার হয়েছে। তারা ন্যায়বিচার চান। নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হলে তারা রাখাইনে ফিরে যেতে চান।
নিকোলাস কোমজিয়ান এ কারণেই রোহিঙ্গাদের ওপর গুরুতর অপরাধ করা ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার ওপর জোর দিয়েছেন।
মানবাধিকার পরিষদে আলোচনায় মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত বলেন, রাখাইন ও চীন রাজ্যে রোহিঙ্গা, রাখাইন, ম্রোসহ অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর ওপর সশস্ত্র সংঘাতের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কিছু উপগ্রহ চিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় উত্তর রাখাইন রাজ্যে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোর নামও মানচিত্র থেকে মুছে দিচ্ছে।