জেনেভা কনভেনশন মেনে মাল্টা থেকে ৪৪ বাংলাদেশিকে ফেরত
চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত মাল্টা থেকে ৪৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে মাল্টা সরকার। বিশেষ একটি বিমানে করে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
তারা সবাই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন মাল্টা সরকারের কাছে। তবে মাল্টায় কোনো দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস না থাকায় গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের পাসপোর্টসহ সব কাজ করে থাকেন।
তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি দূতাবাস অবগত রয়েছে। জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করার পর গত ১২ জানুয়ারি মাল্টা প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাদের।
এ ব্যাপারে গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মো. খালেদ বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি হয়।
স্ট্যান্ডার অপারেটিং প্রসেডিওর ফর রিটার্ন অব ইরেগুলার বাংলাদেশি ন্যাশনাল লিভিং ইন ইউরোপ নামে এ চুক্তির আওতায় যেসব বাংলাদেশি অভিবাসী অনিয়মিতভাবে ইউরোপে বা মাল্টা প্রবেশ করে, আইনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করার পরও তারা যদি বৈধ হতে না পারে, সে ক্ষেত্রে সেই দেশের সরকার বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করলে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত নেবে।
তিনি বলেন, ফেরত বাংলাদেশিদের জেনেভা কনভেনশনের যথাযথ নিয়ম মেনে দেশে পাঠানো হয়েছে। তারা সবাই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিল মাল্টা সরকারের কাছে। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের উপযুক্ত তথ্য না থাকায় মাল্টা সরকার তাদের ফেরত পাঠায়। এখানে দূতাবাসের করণীয় কিছু নেই।
এসব বাংলাদেশি লিবিয়ায় কাজ করত। পরে লিবিয়া থেকে মাল্টায় প্রবেশ করে। তারা দূতাবাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কথা বলতে পারেন কিন্তু দূতাবাস আইনের বাইরে কোনো সহযোগিতা করবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালায় এ বিষয়ে অবগত রয়েছে। তা ছাড়া দূতাবাস নিশ্চিত হয়েছে যে, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের সব প্রক্রিয়া শেষ করেই মাল্টা সরকার তাদের ফেরত পাঠায়।
ঢাকায় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গা কিনা যাচাই-বাছাই করার পর নিশ্চিত হয়ে দেশে ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৪৪ বাংলাদেশিকে।
ফেরত বাংলাদেশিকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যেন তারা নিজ গন্তব্যে সঠিকভাবে পৌঁছতে পারে। এ ব্যাপারে দূতাবাস সহযোগিতা করেন। এদিকে এক ভিডিওবার্তায় ফেরত বাংলাদেশিরা অভিযোগ করেন দূতাবাস তাদের সহযোগিতা না করে; বরং রাতের আঁধারে তাদের দেশে পাঠাতে ট্রাভেল পাস দেন।
অন্যদিকে সম্প্রতিকালে মাল্টা সরকার একটি ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের চুক্তিতে প্রবেশের সুযোগ দেবে। ফলে এই সুযোগটা যেন হাত ছাড়া না হয়, সেদিকে গ্রিস দূতাবাস নজর রাখছে।
গ্রিসের দূতাবাসের সূত্র অনুসারে এ পর্যন্ত মাল্টায় কমপক্ষে প্রায় ৩৭০ জন বাংলাদেশি জেলে রয়েছে। যাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাখ্যান হয়েছে তাদের ধাপে ধাপে পাঠানো হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এসওপি অনুসরণ করেই তা করা হচ্ছে।